দু’জনেই কথা দিয়েছিলেন খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন৷ কিন্তু ভাগ্য চেয়েছিলো অন্য কিছু৷ তাই বাবলু, সুদীপ দু’জনেই ঘরে ফিরলেন, শুধু কফিনবন্দী হয়ে৷ আজ দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ কলকাতায় আসে পুলওয়ামায় বিস্ফোরণে শহীদ বাংলার সুদীপ বিশ্বাস এবং বাবলু সাঁতরা৷ সন্ধ্যার দিকে শেষবার নিজেদের বাড়ি, পাড়া, কাছের মানুষদের কাছে এলেন তাঁরা৷
সকাল থেকেই বিমানবন্দর এবং দু’জনের বাড়িতে ছিল ভীড়৷ সকলেই চাইছিলেন দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ দেওয়া দুই সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে৷ আজ দুই পাড়ায় কফিন ঢুকতেই ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনিতে ফেটে পড়ে চারপাশ৷ ‘সুদীপ তোমায় ভুলছি না’, ‘বাবলু সাঁতরা অমর রহে’ স্লোগানে স্লোগানে বাবলুরা শেষবার পাড়ায় আসে৷
ছেলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকেই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন সুদীপের মা৷ আজ ছেলের কফিনবন্দী দেহ দেখে আবারও সংজ্ঞাহীন হয়ে যান তিনি৷ কফিন আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর বাবা৷
এই একই চিত্র ছিল বাবলুর পাড়াতেও৷ বাবলু সাঁতরার বাড়ির সামনেই অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সাদা কাপড় আর সাদা ফুলে মোড়া সেই মঞ্চই শেষ শয্যা হয়ে ওঠে বাবলুর। সকাল থেকে মঞ্চ ঘিরে বসেছিলেন প্রতিবেশী, আত্মীয়, বন্ধু সবাই। দিনভর অপেক্ষা করেছেন শহিদ ছেলেটিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন বলে। বাবলুর দেহ সেখানে পৌঁছতেই ফের কান্নার রোল। স্ত্রী মিতা স্বামীর কফিনে আঘাত করেই টুকরো টুকরো করলেন স্বামীর মঙ্গল কামনায় পরে থাকা হাতের শাঁখা। বৃদ্ধা মা কফিনের কাছে গিয়ে একবার দু’হাত তুলে ছেলেকে আশীর্বাদ করলেন। তারপরই ভেঙে পড়লেন কান্নায়।
পুলওয়ামার বিস্ফোরণ শুধু ৪২ জওয়ানের মৃত্যু ঘটায়নি, মৃত্যু ঘটিয়েছে অনেক স্বপ্নের, সংসারের৷ থামিয়ে দিয়েছে পাঁচ বছরের মেয়ের ‘বাবা’ বলে ডাকার জায়গা৷ চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে সন্তানের কাছ থেকে মা ডাক শোনার সুখ৷ ৪২ টি পরিবারকে চির অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে বৃহস্পতিবারের পুলওয়ামা৷