সিআরপিএফ ও রক্তমাংসের মানুষ। এদের বাবুদের ও লাল ফিতে থাকে। এরা ও ফুটবলারদের মতো একটা হলে ও গোল মিস করে আর সেটাই মৃত্যুর কারণ হয়। চিত্রনাট্য অনুযায়ী সব সময় হাঁটতে চলতে লড়তে পারে না। যেভাবে বাস্তবে পরেশ রাওয়াল র’ তে কাজ করেনা। সিনেমার মতো শেষ সিনে, সব সিনে বিজয়ী ও হয় না এরা। কখনো কখনো মরতে হয়৷ কখনো কখনো ঘুম নেমে আসে।
আমার আজ প্রেম উদযাপন করা হয়নি। আপিস ছিল। কাল ছুটি নিয়েছি৷ আজ প্রেম উদযাপনের দিন ছিল। আজ প্রেমিক, পেশাদার, কবি, রাষ্ট্রনায়ক, বেকার, ভবগুরে, এমনকি সেনাবাহিনীর ও প্রেম জাহির করার কথা ছিল।
আজ বিহার, উড়িষ্যার, মনিপুরের কিংবা উত্তর প্রদেশের কোন প্রত্যন্ত গ্রামের নববধূ হোয়াটসাপে তাঁর বরের সাথে খুনসুটি করতেই পারতো সোহাগ নিয়ে, কবে ফিরছে তার খবর নিতে। সিনেমায় যেমনটি হয়। বর কাশ্মীর সিআরপিএফ এ আছে। ৫৪ ব্যাটেলিয়ন। অন্যদিনের মতোই আজ ২৫০০ জন জওয়ান জম্মু থেকে পুলওয়ামা যাচ্ছিল কনভয়ে। মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনে যেমন দেখায়, সেরকমই নিশ্চই কোন ৪জি নেটওয়ার্ক এ বউ এর হাসিমুখের ছবি দেখছিল৷ এসব কিছুই হচ্ছিল ৩৫০ কেজি আইইডি ভর্তি সন্ত্রাসীদের স্করপিও গাড়িটি বিস্ফোরণের আগে।
এখন অবধি ৪৪জন সিআরপিএফ জাওয়ান নিহত। আমরা লিখবো শহীদ। তারপর মালা দেবো, একুশ তোপের সেলামী, শান্তনা, তারপর তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা ছায়াছবি। তা দেখে সত্যি সত্যি এপিগ্লটিসে কিছু হবে। দারুণ কাঁদবো সিনেমা হলে আর কারণে অকারণে বলবোঃ হাউস দা জোশ!
গত সপ্তাহে আইবি নোট সব্বাইকে দেওয়া হয়েছিল কাশ্মীরে। সবাই মানে অবশ্যই ডাললেকের চাওয়ালা বা হাউসবোটের রাধুনিকে না। যাদের জানা উচিৎ ইন্টালিজেন্স সম্বন্ধে তাদের। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, যেকোন মুভমেন্টের আগে স্যানিটাইস করে নিতে হবে এলাকা কারণ আইইডি ব্যবহারের খবর আছে। স্যানিটাইস অর্থাৎ চিরুনি তল্লাশি, ধরপাকড়, এনকাউন্টার ইত্যাদি। এইসব এরা করে নিপুণভাবে তাই রোজ আপনি শান্তিতে ঘুমোন। একদিন গোল মিস হলে হাহাকার শোনা যায়। মধ্যবিত্ত মনের আসলে কী ভয় ওটা?
মাথায় রাখবেন, কাশ্মীরে এখন রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। কোন কাশ্মীরি দল ক্ষমতায় নেই। তাবড় উগ্রবাদী নেতাকে জেলে রাখা হয়েছে। সেনা ও আধাসেনা তৎপর। তবু ৩৫০ কেজি আইইডি শহরে ঢুকে গেল। সিআরপিএফ মুভমেন্ট সম্বন্ধে খবর পেয়ে গেল সন্ত্রাসীরা, রুট জানা হয়ে গেল। জটায়ু হলে বলতো, হাইলি সাসপিশিয়াস। আপনি বলুন, অপদার্থতা।
এক সপ্তাহ আগে জানানো হলে ও কার্যকর করা হয়নি নির্দেশ। এতে বাবুদের কোন গাফিলতি নেই। পাকিস্তান বলেছে “তাদের” কোন হাত নেই, সরকার আগেই বহুবার বলেছে আমাদের সেনার কোন খামতি থাকতে নেই। কারণ দেশ মে হামারে জওয়ান মর রহে হে।
বলির পাঁঠার মতো মর রহে হে। আর এদের নামের দোহাই দিয়ে কিছু লোক মার রহে হে। আমরা যারা যোগী আদিত্যনাথকে পছন্দ করিনা কিন্তু দেশের পতাকাকে হেব্বি নিজের মনে করি, তারা খালি পায়চারি করছি। চায়ের দোকানে এক রাতের জন্য কাশ্মীর আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার কাকুতি মিনতি করছি। কাল সকাল হলেই হেলিকপ্টার চেপে পাকিস্তানে বোম মেরে আসবো ঠিক করছি। রাত নামলে আমরা কিচ্ছুটি করে উঠতে পারিনি। কয়েকটা কুশপুতুল জ্বালিয়েছি বটে। কিন্তু শীতের রাতে, সে আগুন ও টেকে নি খুব বেশিক্ষন।শেষমেশ কিচ্ছুটি না করতে পেরে, সিআরপিএফ জওয়ানদের মতো অসহায় ভাবে হাত কচলেছি।
আমরা যারা সীমান্ত থেকে অনেকটা দূরে থাকি, তারা পাবজি বা অন্য কোন ভিডিও গেমে শত্রুকে কয়েক রাউন্ড গুলি দেগে দিয়েছি ইতিমধ্যে। এবার শুতে হবে।
কাল ছুটি নিয়েছি। রক্তমাংসের মানুষ যেমন নেয়।চোদ্দ তারিখ প্রেম উদযাপন করা হয়নি। যেমন বউ এর উরি দেখা হয়নি। কাল আর একবার দেখে আসলে হয় ছবিটা। অন্ধকার হলে ‘বদলা’ নেওয়া যায় সহজে। এখানে কোন রাষ্ট্রনেতার অনুমতি নিতে হয়না, সেনাকে ব্যবহার করে ভোট রাজনীতি করার ও বালাই নেই সিনেমা হলে।
কাল গোটা দিন টিভির পর্দায় ৪৪টা পরিবারের আর্তনাদ, কান্না, ফুটফুটে মেয়ের কফিন আঁকড়ে থাকা, নববধূর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধ বাবার স্যালুট করা দেখানো হবে। ওরা বেশির ভাগ গ্রাম বা মফস্বলি মানুষ। আধা ভারতবর্ষ। ওদের সামনে আমার মুষ্টিবদ্ধ হাত আর চোখে চোখ রেখে বলার সাহস নেই-
হাউস দা জোশ!
©—- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ