কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে মডেল সোনিকা সিং চৌহানের মৃত্যুর ঘটনা থেকে অব্যহতি পেলেন না অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। গতবছর সোনিকার মৃত্যুতে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছিল বিক্রমের বিরুদ্ধে৷ সেই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আলিপুরে আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি৷ তবে আদালতে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়৷ এরপর নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একই মামলা রুজু করেন বিক্রম৷ বুধবার বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদের এজলাসে মামলার শুনানি হয়৷ বিচারপতিও অভিনেতার আর্জি খারিজ করে দিয়ে বলেন ‘এই মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। এতে হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করবে না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭-র ২৯ এপ্রিল ভোর রাতে পার্টি সেরে ফিরছিলেন বিক্রম-সোনিকা। তদন্তে জানা যায়, দুর্ঘটনার আগে বিক্রমের গাড়ির গতিবেগ ছিল ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি। গড়িয়াহাট মোড় থেকে রাসবিহারী মোড়ের দিকে যাচ্ছিল সাদা রঙের টয়োটা করোলা অলটিস গাড়িটি। অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। পাশে বসে ছিলেন সোনিকা। আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী বিক্রমের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর পৃথক অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
তবে সোনিকার মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই বিক্রম দাবি করেন তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন না। গাড়িও দ্রুত গতিতে চলছিল না। এরপর মামলা শুরু হয়। অভিনেতার আইনজীবীদেরও দাবি ছিল, বিক্রম মদ্যপান করেননি, জোরে গাড়িও চালাননি। তাই তাঁকে এই মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হোক। কিন্তু প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন সোনিকার পরিবারের আইনজীবী। অবশেষে গতকাল হাইকোর্টের রায়দানের পর সেই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন সোনিকার পরিবারের আইনজীবী সঞ্জয় বসু। তিনি বলেন, ‘অকারণে বিচার প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আদালত তা ব্যর্থ করেছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব বিচার প্রক্রিয়া শেষ হোক।’
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের আগে অভিনেতার আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল আলিপুর আদালত। আলিপুর আদালত জানিয়ে দেয় অভিনেতার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর মতো প্রাথমিক তথ্য রয়েছে। হাইকোর্টও সে কথা বলেছে। আলিপুর আদালত বলে ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখ চার্জ গঠন হবে। কিন্তু এরই মাঝে হাইকোর্টে আবেদন জানায় অভিনেতা। শেষমেশ দুই আদালতই জানিয়ে দিল অভিনেতার বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা যাবে। আলিপুর আদালতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সোনিকার মৃত্যু মামলার চার্জ গঠন হওয়ার কথা। দ্রুত যাতে চার্জগঠন হয়, সেটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন বিচারপতি। গতকাল হাইকোর্টের নির্দেশের পর নিম্ন আদালতে চার্জগঠন করতে কার্যত বাধা থাকল না বলেই মনে করছেন সোনিকার পরিবারের আইনজীবী।
অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ের পর সোনিকার পিতা বিজয় সিং বলেন, ‘আমরা আমাদের মেয়েকে আর ফিরে পাব না। তবে, হাইকোর্টের রায় ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে। মিথ্যাকে হারিয়ে সবসময়ই সত্যের জয় হবে। আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যাঁরা এই বেদনাদায়ক
পরিস্থিতিতেও আমাদের সমর্থন করে গেছেন। আমাদের পাশে থেকেছেন।’