দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। কিন্তু তার আগে আবারও নোটবন্দী ইস্যুকে উস্কে দিলেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। ২০১৬ সালের ৮ ই নভেম্বর কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফের একবার মুখ খুললেন তিনি। ‘ফ্রিকনমিক্স পডকাস্ট’ নামের একটি আন্তর্জাতিক রেডিও শোতে এক সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে নোট বাতিল নিয়ে নিজের অনেক না বলাও কথাও প্রকাশ্যে এনেছেন রাজন।
স্টিফেন জে ডাবনার নামের ওই সাংবাদিকের রেডিও শোতে রাজনকে প্রথম প্রশ্ন করা হয়েছিল, আরবিআই গভর্নর পদ থেকে আপনার অবসর নেওয়ার পরই নরেন্দ্র মোদী ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের দাবি ছিল এর ফলে দেশের অর্থনীতি থেকে কালো টাকাকে আলাদা করা যাবে এবং কর ফাঁকি আটকানো যাবে। কিন্তু আপনি কি এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন না?
জবাবে রাজন জানান, একদমই না। এটা করার কোনও মানেই হয় না। তিনি এ-ও জানান যে, এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। এবং জবাবে তিনি বলেছিলেন, এর ফলে দেশের জনগন আর্থিক লেনদেনের জন্য যে টাকা ব্যবহার করেন তা সরিয়ে নেওয়া হবে। এর ফলে বৃহৎ সমস্যার সৃষ্টি হবে যদি না রাতারাতি বাতিল নোটের বদলে নয়া নোট আনা হয়। রাজন বলেছেন, তিনি কেন্দ্রকে আগেই জানিয়েছিলেন, এরপরেও অসাধু ব্যক্তিরা ফের কর ফাঁকি দেওয়ার একটা পথ ঠিক বার করে নেবে।
রাজনের উদ্দেশ্যে এর পরের প্রশ্ন ছিল, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে প্রায় দু’বছর, এর প্রভাব কী পড়েছে? এর জবাবে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সময় যখন তুলনামূলকভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কম ছিল তখন ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৫ শতাংশ। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০১৭ সালে যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ছিল তখন ভারতের বৃদ্ধির হার আরও কমে যায়। আমাদের বৃদ্ধি কমতে শুরু করে।
সুতরাং এর থেকে প্রমাণিত যে, এই সিদ্ধান্তের ফলে এক বিশাল প্রভাব পড়েছিল বৃদ্ধিতে। কিন্তু তার সবটা পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয়নি। কারণ এই সিদ্ধান্তে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল অসংগঠিত ক্ষেত্র। চেকের বদলে এই ক্ষেত্রের বেশিরভাগ মানুষই নগদ লেনদেনে কাজ করেন। যাদের অধিকাংশেরই কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থায় কাজ হারিয়েছিলেন প্রায় ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন মানুষ। সেই ক্ষতি এখনও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। রাজনের মতে, এই ক্ষেত্রে তাই অর্থনীতির দিকগুলি আরও ভালো করে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
এরপরই রাজনকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি পদ থেকে সরে আসার পরই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়, এটা কি নেহাতই কাকতালীয়? এর উত্তরে রাজন জানান, তা তিনি বলতে পারবেন না, কিন্তু তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন।
আরবিআই গভর্নর পদে দ্বিতীয় টার্মে তিনি কেন কাজ করলেন না? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর কার্যকালের মেয়াদ তিন বছরেরই ছিল। এরপর সরকারও চায়নি আর তাঁর নিজেরও ইচ্ছা হয়নি নিজের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোর। তাই আর দ্বিতীয়বার আরবিআই গভর্নর পদে তিনি আসেনি।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে রাজন জানিয়েছেন, সে সম্ভবনা প্রায় শূন্য। কারণ রাজনীতিবিদ হতে গেলে অন্যরকম দক্ষতা লাগে, যা তাঁর নেই। একজন বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি এখন যেখানে আছেন সেখানেই খুশি আছেন। তবে রাজন নিজে রাজনীতিবিদ না হলেও, ভোটের মুখে তাঁর দেওয়া এই সাক্ষাৎকার যে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের অনেকটা অক্সিজেন জোগাল, তা বলাই বাহুল্য।