সময় বড়ই খারাপ যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর। দেশের অন্যান্য জায়গা তো বটেই, এবারে ‘মোদীর রাজ্য’ গুজরাটেও মোদী বিমুখ হাওয়া বইছে। আর এই বিমুখী হাওয়া যে মোদীর মুখে বেশ চিন্তার ছাপ ফেলছে সেই কথা বলাই বাহুল্য। গত লোকসভা ভোটে মানুষের জন্যে কাজ করবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে বিদেশ যাত্রা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন তিনি, যে সাধারণ মানুষের কথা তাঁর মাথাতেই ছিল না। এর ফলেই মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে মোদীর প্রতি অসন্তোষ।
মোদী তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বানিয়েছেন, কিন্তু খরা থেকে কিষানদের বাঁচাতে তাঁর সরকারের কোনও বরাদ্দ নেই! আর এই খরা এখন গ্রামীণ গুজরাটের সবচেয়ে বড় সমস্যা। সম্প্রতি গুজরাটে বিজেপি সরকার তা নিয়ে চরম অস্বস্তিতেও পড়েছে। খরা রুখতে কেন্দ্রের কাছে ১৭০০ কোটি টাকা চেয়েছিল রাজ্য সরকার। বদলে কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে মাত্র ১২৭ কোটি টাকার আশেপাশে। তা নিয়ে সরকারকে বিরোধীরা যেমন চেপে ধরেছে, তেমনই গ্রামীণ এলাকাতেও এর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে বলে বিজেপিরই অন্দরের সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে। গ্রামীণ গুজরাটের বিষয় ছোট পত্রিকা চালান মণিলাল প্যাটেল। কর্মসূত্রে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। মণিলালের কথায়, ‘নর্মদা নদীর উপরে বিশাল বাঁধ তৈরি করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। কারণ সেই সব জল বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে কল কারখানায়। চাষীদের জন্য কিছুই থাকছে না। এখন তো তবু পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু গ্রীষ্মে খাবারের মতো জলও বহু এলাকায় থাকছে না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, নানা কারণে মোদী হাওয়া স্তিমিত তাঁর জন্মভূমিতেই। কেন? আমেদাবাদের অন্যতম প্রাচীন ও গৌরবময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচ কে কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত কুমার শাহের মূল্যায়ন, ‘যে গুজরাট মডেলের উপর ভরসা করে মোদী গত নির্বাচনে সারা দেশে হাওয়া তুলেছিলেন, সেই মডেল নানা কারণে প্রশ্নের মুখে। সরকারের দেওয়া তথ্যই বলছে, এখন ১৬ লাখ শিক্ষিত বেকার গুজরাটে। ৩০ লক্ষ মানুষ সরকারি ভাবে গরীব কারণ দরিদ্র কল্যাণে যে সব প্রকল্প সরকার নিয়েছে এরা তার অধীনে। তা হলে উন্নয়নের মডেলে গুজরাটিদের কী সুবিধে হয়েছে?’’ সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতি মোটেও সুবিধার নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মোদী শিবির।