মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলে থাকেন যে ‘এগিয়ে বাংলা’। এই তথ্য যে একেবারে নির্ভুল, একাধিক বার তার প্রমাণ মিলেছে কেন্দ্রীয় রিপোর্টে। কিন্তু প্রশ্ন হল কতটা এগিয়েছে বাংলা? শিল্প, কৃষি, কর্মসংস্থান, পরিকাঠামো এবং গড় জাতীয় উৎপাদনে সারা দেশের নিরিখে বাংলার অবস্থান ঠিক কোথায়? বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরাই। ‘দিদি’কে পাশে নিয়ে রিলায়েন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজের প্রধান মুকেশ আম্বানি যেমন নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই বেঙ্গল এখন হয়েছে ‘বেস্ট বেঙ্গল’।
আজ, বৃহস্পতিবারই নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে শুরু হয়েছে দু’দিনের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, মাইক্রো, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পোদ্যোগে সারা দেশের মধ্যে এখন সেরা বাংলাই। গড় জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হারেও সারা দেশের মধ্যে এখন সবার আগে এ রাজ্যই। পাশাপাশি বাংলা শ্রেষ্ঠত্বের জায়গায় উঠে এসেছে স্টিল উৎপাদন, গ্রামোন্নয়ন, সড়ক পরিবহণ এবং আবাসন পরিকাঠামোতেও। রাজ্যে কৃষকদের আয় বেড়েছে তিন গুণ। আর কর্মসংস্থান বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। অর্থনীতির এই সব বিস্তারিত তথ্য দিয়েই বাণিজ্য এবং শিল্প মহলের প্রতিনিধিদের কাছে রাজ্যকে তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলাই কেন হতে চলেছে বিনিয়োগের নয়া গন্তব্য, তাঁর সপক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ‘দূরত্বের কারণেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভারতের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর কলকাতা। খুব কম সময়েই কলকাতা থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর-সহ আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সরবরাহ এখানে ২৪ ঘণ্টা নিশ্চিত, যা শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার ছেলেমেয়েরা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন বড় সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। তাই প্রশিক্ষিত কর্মীরও অভাব নেই পশ্চিমবঙ্গে। এই সব কারণেই বিনিয়োগের জন্য এই দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং নিরাপদ জায়গা এই বাংলার মাটিই।’
কলকাতা এবং জার্মানির মধ্যে বিমান চালু করা যায় কিনা, তা নিয়েই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কলকাতা এবং ফ্রাঙ্কফুটের মধ্যে উড়ান চালুর প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। দিনের শুরুতে অবশ্য ‘জয় বাংলা’ বলে বাণিজ্য সম্মেলনের সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন মুকেশ আম্বানিই। রাজ্যের অর্থনীতি দশ লক্ষ কোটির সীমা ছাড়ানোয় মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানান তিনি। নিজের বক্তব্যে রিলায়েন্স প্রধান বলেন, “জয় বাংলা। জয় বিশ্ব বাংলা। ‘সিটি অব জয়’ এখন ‘সিটি অব হোপ’। ওয়েস্ট বেঙ্গল আজ বেস্ট বেঙ্গল৷ মমতাদির নেতৃত্বে বাংলা এগোচ্ছে ৷ বাংলার এই বদলকে স্বাগত জানাচ্ছি৷ বাংলায় অনেক সম্ভাবনা আছে ৷ বাংলায় ডিজিটাল বিপ্লব চলছে। এই দশকের শুরুতে রাজ্যের অর্থনীতির পরিমান ছিল ৪ লক্ষ কোটি টাকা। এখন তা দশ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সেই জন্য অভিনন্দন মুখ্যমন্ত্রীকে।”
সেইসঙ্গে বাংলা কী ভাবে রিলায়েন্সের বিনিয়োগের গন্তব্য হয়ে উঠেছে, সেই পরিসংখ্যানও দেন মুকেশ। তাঁর কথায়, ‘২০১৬ সালে আমি প্রথম এসেছিলাম এই সম্মেলনে, তখন আমাদের সংস্থার মোট বিনিয়োগের পরিমান ছিল ৪,৫০০ কোটি টাকা। তিন বছরের মধ্যে সেই বিনিয়োগ এখন গিয়ে দাঁড়িয়েছে আঠাশ হাজার কোটি টাকা।’ মুকেশ জানান, ‘সারা দেশে আমরা যা বিনিয়োগ করি, তার দশ ভাগের এক ভাগই বাংলায়।’