সকাল থেকেই গোটা রাজ্য অপেক্ষায় ছিল বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া লগ্নি-বার্তার। এত মানুষের প্রত্যাশা যে ব্যর্থ হবে না, তা জানাই ছিল। সুখবর আসা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। সকলের প্রত্যাশা মতোই পরিষেবা ও তথ্যপ্রযুক্তর পাশাপাশি এবার উৎপাদন ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও নজরে বাংলা। আর তাতে একগুচ্ছ লগ্নির প্রস্তাবও পেল রাজ্য।
৩৪ বছরের বাম জমানার ইতিহাস যাই হোক, বর্তমান সময় কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আশা দেখাচ্ছে। পরিকাঠামো ও উৎপাদন ক্ষেত্রে বাংলায় বড় লগ্নি টানা কঠিন, এই মিথ যে এবার শেষ, বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই তাঁর আভাস মিলল। এ বছর শিল্প সম্মেলনের প্রথম দিনেই প্রায় ৪০,২০০ কোটি লগ্নির প্রস্তাব এল বাংলায়। আর এর বড় অংশ এল স্রেফ পরিকাঠামো ও উৎপাদন ক্ষেত্রেই। বাণিজ্য সম্মেলনকে হাতিয়ার করেই যে বাংলার এই ব্র্যান্ডিং টাচ, তা খোলাখুলি স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
শিল্প সম্মেলনে ফোকাস ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। সেইসঙ্গে বড় লগ্নি টানতে সড়ক ও জলপথ পরিবহণ, ভৌগলিক সুবিধা-সহ একাধিক বিষয় তুলে ধরা হয়। ফল, সম্মেলন মঞ্চ থেকে একের পর এক বড় বিনিয়োগের ঘোষণা। যেমন ১০ হাজার কোটি বিনিয়োগ করলেন মুকেশ আম্বানি৷ তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রেই এই লগ্নি রিলায়েন্সের৷ মোট ৬ হাজার কোটি বিনিয়োগ সজ্জন জিন্দল৷ সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি ও হাসপাতালে বিনিয়োগ তাদের৷ এছাড়া ৫০০ কোটি বিনিয়োগ কোকাকোলার। শিলিগুড়িতে বিনিয়োগ করবে তারা৷
অন্যদিকে, ২ বছরে ১৫ হাজার কোটি বিনিয়োগ করবেন ওয়াইকে মোদী৷ বিকল্প শক্তি ও জ্বালানিতেই ১৫ হাজার কোটি ঢালবে ওয়াইকে মোদী গ্রুপ। আইটিসি বিনিয়োগ করবে ৫৭০০ কোটি টাকা। জানা গেছে, কৃষি বিপণন থেকে প্যাকেজিংয়ে লগ্নি করবে তারা৷ আবার গেলের সঙ্গে গ্যাস পাইপলাইনের কাজ করবে নন্দিনী গ্রুপ৷ পাশাপাশি কুলপি বন্দরের জন্য এসেছে ৩ হাজার কোটি বিনিয়োগের প্রস্তাব৷ আসলে বাংলায় শিল্পের পরিবেশ ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত দেশের শীর্ষস্তরের শিল্পপতিরা। সে কারণেই এসেছে এই বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ।
গত বছরের মতো এবারও বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি৷ মঞ্চে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়েই প্রথমেই তিনি বলেন, কলকাতায় আবার আসতে পেরে তিনি খুশি৷ তাঁর মতে, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আজ বেস্ট বেঙ্গল৷ মমতাদির নেতৃত্বে বাংলা এগোচ্ছে ৷ বাংলার এই বদলকে স্বাগত জানাচ্ছি৷ বাংলায় অনেক সম্ভাবনা আছে ৷ বাংলায় ডিজিটাল বিপ্লব চলছে।’ প্রসঙ্গত, শিল্প সম্মেলনের অনেক আগে থেকেই বাছাই করা শিল্পপতিদের কাছে পৌঁছে লগ্নি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে রাজ্য। যার ফল হাতে-কলমে দেখা গেল সম্মেলনের প্রথম দিনেই। শিল্প সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এমনই আরও একগুচ্ছ প্রস্তাব আশার অপেক্ষায় রাজ্য।
অন্যদিকে, লগ্নি টানার মঞ্চে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও ছুঁয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের পর, সরকার বদলালে কী হবে দেশের শিল্পনীতি? বিনিয়োগকারীদের সেই বার্তা দিলেন ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার কাণ্ডারী। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ না করলেও, নাম না করে খোঁচা দিলেন এনআরসি নিয়ে। পাশাপাশি প্রতিটি রাজ্যের প্রতিনিধি হয়েই শিল্পপতিদের বার্তা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নানা কারণে দেশ থেকে ফিরে যাওয়া পুঁজিপতিদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, দেশের নানা অংশে অস্থিরতা থাকলেও ব্যতিক্রম এ রাজ্য। বাংলা সবার, এখানে সকলের জন্য ঠাঁই রয়েছে৷