এতদিন রামলালাকে নিয়ে তাদের মাতামাতির শেষ ছিল না। কিন্তু অযোধ্যার রামমন্দির নিয়ে এবার পাল্টা প্যাঁচে পড়ে গেল উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার এবং বিজেপি৷ মোদীর কথা মেনে নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-সহ সঙ্ঘ পরিবার জানিয়েছে, তারা ছ’মাস অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। তারপরই রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে উঠে পড়ে লাগবেন তারা৷ তবে এই পথে হাঁটতে নারাজ দ্বারকার শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে অন্য ধর্মসংসদ৷ তাঁরা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারিই অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস করতে চান৷ আর এতেই বিপাকে যোগী সরকার-সহ বিজেপি নেতৃত্ব।
প্রশ্ন উঠছে, যদি দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্য তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন এবং সাধু-সন্ত-সহ কয়েক হাজার লোক নিয়ে অযোধ্যা পৌঁছে যান, তখন যোগী সরকার কী করবে? সরকারের সামনে তখন দু’টি বিকল্প, হয় শিলান্যাস করতে দিতে হবে অথবা তাঁদের বাধা দিতে হবে৷ শিলান্যাস করতে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না৷ কারণ, মোদী সরকার ও ভিএইচপি চাইছে রামমন্দির নির্মাণের কাজটা রাম জন্মভূমি ন্যাসই করুক৷ কিন্তু এই অবস্থায় তাঁদের বাধা দিতে হলে প্রয়োজনে পুলিশকে লাঠি চালাতে হবে, অন্ততপক্ষে তাঁদের আটকে দিতে হবে৷ কথা হল, যোগী সরকার সাধু-সন্তদের আটকে দিচ্ছে, সেটাও আবার রামমন্দির নিয়ে, এই বার্তাটি গেরুয়া বসনধারী মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দলের ইমেজের পক্ষে খুব ভালো হবে কি?
সূত্রের খবর, আপাতত স্বরূপানন্দ সরস্বতী-সহ অন্য সাধুদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করা হবে৷ কিন্তু, স্বরূপানন্দ সপষ্ট বলে দিয়েছেন, তাঁরা কোনও বাধা মানবেন না৷ চাইলে তাঁদের গ্রেফতার করা হোক৷ দরকার হলে সরকার গুলিও চালাতে পারে৷ তাতেও ভয় পাওয়ানো যাবে না তাঁদের৷ ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁরা অযোধ্যা যাবেনই৷ এখানেই শেষ নয়। দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্যের প্রশ্ন, কেন্দ্রে মোদী সরকারের সখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, তা হলে তারা কেন রামমন্দির বানাবার জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করছে না?
অন্যদিকে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাড়তি মুশকিল হল, তারা রামমন্দির তৈরির দাবিটা খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু করেছিল। সরসঙ্ঘচালক-সহ আরএসএসের বাকি নেতারাও সুর চড়িয়েছিলেন৷ কিন্তু, সরকারের কৌশল মেনে তাঁদের পিছিয়ে আসতে হয়েছে৷ কিন্তু সাধারণ সমর্থকেরা তা শুনতে চাইছেন না৷ ভিএইচপি-র ধর্মসংসদে তো কর্মীরা বারবার করে দাবি জানিয়েছেন, রামমন্দির নির্মাণের দিন ঘোষণা করতে হবে৷ সরব হয়েছেন আখাড়া পরিষদের সাধুরাও। অনেক সাধু-সন্ত প্রশ্ন তুলেছেন, কেন রামমন্দির তৈরি করা হবে না? তাঁদের অভিযোগ, বিজেপির শীর্ষ নেতারা সব মন্দিরে যান৷ কিন্তু রামের মন্দির তৈরি করতে তাঁদের কোনও আগ্রহ নেই৷ সবমিলিয়ে রামমন্দির নিয়ে এখন ধর্মসংকটে বিজেপি। বিপাকে যোগী সরকার।