কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই হানার চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ করে গতকালই ধর্নায় বসেছেন তিনি। রবিবার রাত যত বেড়েছে, ততই ধর্মতলায় মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নামঞ্চ ঘিরে কাতারে কাতারে মানুষ হাজির হয়েছেন। শীতের রাতে মমতা সকলকে অনুরোধ করছেন, ঠান্ডা পড়েছে, আপনারা বাড়ি ফিরে যান। সে কথা শোনার মত অবস্থায় নেই আগত মানুষজন। গণতন্ত্র বাঁচানোর যে ডাক মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, সকলেই তাতে সামিল হতে চান। আপনি যতক্ষণ এখানে থাকবেন, আমরাও বসে থাকব— জনতার মধ্য থেকে উঠে এসেছে এমন মন্তব্যও।
মমতার ডাকে ব্রিগেডে ঐতিহাসিক জনসমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলির তাবড় তাবড় নেতারা। তাঁরা প্রত্যেকেই বিজেপি বিরোধী জোট গড়া নিয়ে মমতার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এবার মমতার এই ধর্নাকে সমর্থন করেও বিরোধী নেতাদের ফোন আসতে শুরু করে। টুইট করেও পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন অনেকে। শুধু তাই নয়, মমতার এই গণতন্ত্র বাঁচাও আন্দোলনকে আরও গতি দিতে আজই কলকাতায় আসছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব প্রমুখ। মোদ্দাকথা রবিবার সিবিআই হানা পরবর্তী উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের বিরোধী ঐক্য আরও মজবুত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নার সঙ্গে সঙ্গেই গতকাল রাতে চলে অস্থায়ী মঞ্চ বাঁধার কাজ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মঞ্চের কাঠামো বাঁধা হয়। রাত একটা নাগাদ মঞ্চ বাঁধার কাজ শেষ হয়। তার আগে তিনি মাটিতেই বসেছিলেন। এরপর রাত দেড়টায় তিনি মঞ্চে উঠে যান। তার আগে অবশ্য সকলকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা খেয়েছেন কিনা। অন্যদিকে, ধর্নামঞ্চকে ঘিরে মন্ত্রী থেকে শুরু করে ভিআইপির সংখ্যা আনাগোনা বাড়তে থাকে। সমানে বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের ভিড়। কলকাতা এবং শহরতলি থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি এবং তৃণমূলের পতাকা নিয়ে হাজির হন বহু মানুষ। মন্ত্রী থেকে সরকারি আমলা বা পুলিশ কর্তা, কে নেই সেই ভিড়ে।
মমতার সঙ্গেই মঞ্চে ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মল মাজি, রত্না কর ঘোষ, লক্ষ্মীরতন শুক্লা, উজ্জ্বল বিশ্বাস, এমপি শুভাশিস চক্রবর্তী সহ নেতা-মন্ত্রীরা। ছিলেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ প্রমুখ। ধর্নামঞ্চ ঘিরে দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও ঘাঁটি গেড়ে আছেন এখনও। ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকায় পুলিশ শেষমেশ বিভিন্ন প্রান্ত লোহার গার্ডবেল দিয়ে ঘিরে দেয়। অন্য আর পাঁচটা রাত যেমন ধর্মতলা চত্বর নিঃঝুম থাকে, গতকালের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। মাঝরাতেও পুলিশকে দেখা যায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে। আজ সকালেও এ চিত্র বদলায়নি।
উল্লেখ্য, সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেতমজুরদের সঙ্গে সভা করার কথা ছিল। ধর্না চলায় তিনি সেখানে যেতে পারবেন না। তাই ধর্নামঞ্চ থেকেই ভিডিও কল করে ক্ষেতমজুরদের বার্তা দেবেন। উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্ট ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিস কমিশনারকে জেরা করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু, তারমধ্যেই রবিবার সিবিআই কর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসে। রাজ্য প্রশাসন মনে করছে, এটা আদালত অবমাননারই সামিল। সেই কারণে আজ, সোমবার কলকাতা পুলিশ তথা রাজ্য প্রশাসন এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়েছেন, পুলিশ কমিশনার তথ্য নষ্ট করতে পারেন, এটা আগে প্রমাণ করুক সিবিআই। আগামীকাল শুনানির দিন স্থির করেন তিনি।