কলকাতা পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই অফিসারদের হামলার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী-শাহদের হাত থেকে সংবিধান বাঁচানোর স্বার্থে রাতেই ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেছেন তিনি। আর শীতের রাতেই মমতার ধর্নার সমর্থনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক আসতে শুরু করেছে ফোন, টুইট এবং সমর্থনবার্তা। সব মিলিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নামঞ্চই হয়ে উঠেছে ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’। ১৯-এর ব্রিগেডে মোদী-শাহদের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছিল, ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে সেই লড়াই পেল শক্ত ভিত। আর মমতা হয়ে উঠলেন বিজেপি বিরোধিতার প্রধান মুখ।
মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসার পর মমতাকে সমর্থন জানিয়ে রাতেই ফোন করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। দেশের সংবিধানের ওপর মোদী ও বিজেপি যে আঘাত করেছে বাংলার ঘটনা তারই অঙ্গ জানিয়ে রাহুল মমতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন। ফোন করে মমতাকে নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন এম কে স্ট্যালিন, অখিলেশ যাদব, চন্দ্রবাবু নায়ডু, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শরদ পাওয়ার, লালু প্রসাদ যাদব, ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি, যশবন্ত সিনহা, তেজস্বী যাদব, হেমন্ত সোরেন, হার্দিক প্যাটেল, অভিষেক মনু সিংভি, শরদ যাদব, জিগ্নেশ মেবানি, এইচডি কুমারস্বামী, জয়ন্ত চৌধুরিরা। প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট বিজেপির জামানায় সমস্ত প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি, মমতার এই লড়াইয়ে তাঁর পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন তাঁরা।
কলকাতায় মমতার ধর্না কাঁপিয়ে দিয়েছে সাংসদও। সোমবারের সাংসদে সিবিআই নিয়ে আলোচনার দাবিতে প্রবল হট্টগোল শুরু হয়ে যায় সাংসদে। যার জেরে মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের দুই কক্ষই। সংসদে বিজেপি বিরোধী সমস্ত দল তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটানা আলোচনা করে একযোগে সরকারকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিজেপি বিরোধী ১৫টি দল তৃণমূলের সঙ্গে একযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায়। সেখানে কংগ্রেস ছাড়াও বিজেডি-র মতো দলও সিবিআই নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। লোকসভা ও রাজ্যসভার পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে শেষপর্যন্ত সভা মুলতুবি করে দিতে হয়। সব মিলিয়ে বিজেপি বিরোধিতায় সমস্ত দলই চাইছে তাঁদের ত্রাতা হয়ে উঠুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গতকাল সারারাত ধর্নামঞ্চে দুচোখের পাতা এক করেননি মমতা। এনার্জিতে টগবগ করে ফুটছিলেন। বারবার পায়চারি করছিলেন। কখনও মঞ্চেরও উপরে কখনও মঞ্চের পিছনে। দলীয় নেতা-কর্মীদের ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। আজ দুপুরে ধর্নামঞ্চেই বসছে ক্যাবিনেট বৈঠক। জেলায় জেলায় শাসক দলের কর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানাতে শুরু করেছেন সকাল থেকেই। কলকাতার দিকেও আসছেন বহু কর্মী-সমর্থক। এখন সারা দেশের চোখ ধর্মতলায় মমতার ধর্নামঞ্চের দিকে।