কলকাতা পুলিশ বনাম সিবিআই দ্বৈরথ যে আসলে কেন্দ্রের মোদী সরকারের ষড়যন্ত্রের ফল, তা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করতে মেট্রো চ্যানেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্নায় বসেছেন তিনি। আর কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই চরম সংঘাতের পথে প্রায় সব বিজেপি-বিরোধী দলের সমর্থন পেলেন মমতা। ধর্না শুরুর পর থেকেই তাঁর সমর্থনে মুখ খোলেন দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা। একজোট হয়েই প্রতিবাদ জানালেন সকলে।
ঘটনার কথা জানার পরই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘এটা অত্যন্ত শকিং। এবং আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে নেমেছেন। আমরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে দেশের সংবিধান রক্ষার পাশাপাশি দেশের ফেডারেল স্পিরিটকে বজার রাখার চেষ্টা করবো।’
টুইট করে ঘটনার নিন্দা করেছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়াও। তাঁর টুইট, ‘পুলিশ কমিশনারকে গ্রেফতার করতে সিবিআই হানা বাংলায়! এই মুহূর্তে ওখানে যা হচ্ছে, তাতে হতবাক আমি। জরুরি অবস্থার সময় এরকম অসাংবিধানিক আচরণ ঘটত। এই মুহূর্তে বাংলার পরিস্থিতি সেরকমই।’
রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে মমতাকে সমর্থন করে টুইট করেছেন অখিলেশ যাদবও। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘দেশে উৎপীড়ন চালাচ্ছে বিজেপি সরকার। সিবিআইয়ের অপব্যবহার করছে। দেশের সংবিধান ও মানুষের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে বসেছে। এই নিপীড়ণের বিরুদ্ধে যে ভাবে ধর্নায় বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমার। বিজেপিকে পরাজিত করতে এই মুহূর্তে একজোট দেশবাসী ও বিরোধী নেতারা।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তিনি লেখেন, ‘দেশের গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করছেন মোদীজি। কয়েক বছর আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে দিল্লির অপরাধ দমন শাখাকে আটক করিয়েছিলেন। আজ আবার এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। মোদী-শাহ জুটি ভারত এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। আজকের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।’
এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার বলেছেন, সিবিআইয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বিজেপি। ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন টুইট করে বলেছেন, এই ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকারের জমানায় সমস্ত প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। আমি মমতাদিদির সঙ্গে তাঁর এই লড়াইয়ে আছি।
যশবন্ত সিনহা বলেছেন,’গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী! এখন তিনি আমাদের দেশের ফেডারেল কাঠামো ধ্বংস করছেন। জেগে ওঠো এবং দেরি হওয়ার আগেই থামো।’ কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেলও ফোন করে সমর্থন করেছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন তেজস্বী যাদবও। কাল অর্থাৎ সোমবার তিনি কলকাতায় আসতে পারেন বলেও জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে রীতিমতো চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত। দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা করতে তিনি যে ধর্না ছেড়ে উঠবেন না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সাফ বলে দেন, ‘যতক্ষণ না পরিস্থিতির বদল হবে, ততক্ষণ ধর্না চলবে।’ তাঁর বক্তব্য, ‘এটা সত্যাগ্রহ। গান্ধীজির মতো আন্দোলন।’
আজ রাজ্য বাজেট রয়েছে, তার আগে নিয়মমতো মন্ত্রীসভার বৈঠক রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ধর্নামঞ্চের পাশেই তিনি আজ মন্ত্রীসভার বৈঠক করবেন। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে বিধানসভায় রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রাজ্য বাজেট পেশ করবেন। কৃষক সমাবেশের ভাষণ আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই দেবেন মুখ্যমন্ত্রী৷