নির্বাচনের আগে প্রথা মতোই অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা হয়েছে গতকাল। সেই বাজেটকেই ‘আখরি জুমলা বাজেট’ আখ্যা দিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। মোদী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটের বিরোধীতায় প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগে টুইটও করেন রাহুল। সেখানে তিনি লেকজেন, ‘ডিয়ার নমো। পাঁচ বছর ধরে আপনার অহঙ্কার এবং ব্যর্থতা আমাদের কৃষকদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। দিনে ১৭ টাকা দেওয়ার ঘোষণা আদতে কৃষকদের অপমান।’ পাশাপাশি এই বাজেটকে সরকারের ‘আখরি জুমলা বাজেট’ বলে কটাক্ষের সুর চড়ান তিনি।
একইসঙ্গে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও অন্তর্বর্তী বাজেট নিয়ে তোপ দাগেন। তিনি বলেন, গরিব এবং প্রান্তিক কৃষকদের এখনই যে দু’ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা হল, তা আদতে ভোট কেনার টাকা। তাই মোদী সরকারের এটা ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট নয়। অ্যাকাউন্ট ফর ভোট।’
বাজেটে গরিব কৃষকদের মন জয়ের লক্ষ্যে তিন দফায় বছরে মোট ছ’হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী পীষূষ গোয়েল। ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’ নামে এই প্রকল্পের জন্য সরকার বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করল সরকার। কিন্তু ভোট বড় বালাই! তাই মূল ঘোষণা আগামী আর্থিক (২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মার্চ) বছরের জন্য হলেও গরিব এবং প্রান্তিক কৃষকরা যাতে এখনই এই প্রকল্পের সুবিধা পায়, তারই লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকেই এটি কার্যকর করার হচ্ছে জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী।
কর ছাড় থেকে কৃষকদের প্রাপ্তি, লোকসভায় বাজেট পেশের সময় এক একটি বড় ঘোষণায় ট্রেজারি বেঞ্চ যখন উল্লসিত, গরিব কৃষকদের মন জয়ের দাওয়াই হাতে পেয়েছেন ধরে নিয়ে প্রচারে ঝাঁপাতে তৈরি হচ্ছে, তখন সেই আশায় জল ঢেলে দিতে পাল্টা মাঠে নামল কংগ্রেস। কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর নামে এটি আসলে ভোট কেনার বরাদ্দ বলেই তোপ দাগল তারা। বছরে ছ’হাজার টাকার অর্থ হল গড়ে দৈনিক মাত্র ১৭ টাকা। ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে এই টাকা দেওয়ার ঘোষণা আদতে ‘জুমলা’ই, মত রাহুলের।
অন্যদিকে চিদম্বরম প্রশ্ন তোলেন, কৃষকদের জন্য ঘোষণা হলেও আদতে এটি চলে যাবে জমির মালিকদের হাতে। ভাগ চাষি এবং কৃষি শ্রমিকদের হাতে কীভাবে এই টাকা পৌঁছবে তার কোনও দিশা সরকারের কাছে আছে কী? তাছাড়া এটি স্রেফ কৃষকদের জন্য ঘোষণা। গরিবদের জন্য কী? অন্যদিকে, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে বিজেপিকে পরাস্ত করে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেস কৃষকদের ঋণ যেভাবে মকুব করেছে, একইভাবে ২০১৯ সালে মোদীকে হারিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে দেশের গরিবদের জন্য নূন্যতম নিশ্চিত উপার্জন প্রকল্প আনবেন বলে ঘোষণা করেছেন রাহুল গান্ধী।
চিদম্বরম আরও বলেন, নামে অন্তর্বর্তী বাজেট হলেও এটি আদতে পূর্ণাঙ্গ এবং নির্বাচনী প্রচার বাজেট। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, সরকার বুঝে গিয়েছে আর ফিরছে না। তাই রীতি ভঙ্গ করে যা ইচ্ছে ঘোষণা করেছে। মোদী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চিদম্বরম আরও বলেন, সরকার আচমকাই গরুর উন্নয়নে ৭৫০ কোটি টাকা, নতুন একটি মৎস্য দফতর এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য অবসর প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে। আমাদের প্রশ্ন, এগুলি যখন এতই প্রয়োজন ছিল তাহলে গত পাঁচ বছর কী করছিল মোদী সরকার? কেন আগে ঘোষণা হয়নি? তাঁর কথায়, দেশের কথা ভেবে নয়, নিজেদের স্বার্থপূরণের লক্ষ্যেই এমন বাজেট পেশ করেছে মোদী সরকার, যা আপাদমস্তক জুমলা।