গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষার রিভিউ মিটিংয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জেলায় জেলায় এখনও কিছু মামলা পড়ে রয়েছে। যার মধ্যে একটা বড় অংশই হয় পেনশন সংক্রান্ত, নয়তো সময়ে গ্র্যাচুইটি পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। শুধু তাই নয়, এখনও কিছু প্রাথমিক স্কুলে ঠিক মতো পরিদর্শন হচ্ছে না। এ নিয়েই গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। দু’টি প্রসঙ্গেই তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, কোনও কিছুতেই গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। কোথায় কত মামলা রয়েছে, তা দফতরকে জানাতে হবে।
এর পাশাপাশি অফিসে বসে না থেকে স্কুলগুলিতে গিয়ে তাদের হাল-হকিকত জানার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সাতদিনের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় কয়টি মামলা রয়েছে, তার রিপোর্ট পাঠাতে হবে। কী ধরনের মামলা, তা বিশদে রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে। এমনকি কোন আইনজীবী তা দেখছেন, তাও জানাতে হবে। আটদিনের মাথায় যদি দেখা যায়, কেউ সেই রিপোর্ট দেননি, তাহলে যিনি ওই মামলা দেখার দায়িত্বে রয়েছেন, সেই আধিকারিককে সরে যেতে হবে।
ওই রিভিউ বৈঠকে সব জেলার পরিদর্শক, সার্কেল ইন্সপেক্টর, ডিপিএসসি চেয়ারম্যান-সহ একাধিক আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা ধরে ধরে প্রত্যেককেই রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। জেলায় কী কাজ হয়েছে, কী বাকি রয়েছে, কোথায় খামতি বা দাবি কী, তা সকলেই কমবেশি বৈঠকে পেশ করেন। বহু জেলাই জানায়নি তাদের জেলায় কত মামলা রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এক এক করে সেইসব তথ্য জানতে চাইলে চাপে পড়ে যান বিভিন্ন জেলার ডিআই সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। কেন এত মামলা, তার স্পষ্ট জবাবও দিতে পারেননি অনেকেই।
প্রথমেই জলপাইগুড়িতে কত কেস রয়েছে, তা উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই জেলায় ৩৪৪টি মামলা ঝুলে রয়েছে। কী নিয়ে মামলা, তার প্রেক্ষিতে জেলা আধিকারিকরা বলেন, অবসরকালীন সুবিধা পেতে দেরি সংক্রান্ত মামলাই বেশি। সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে মালদহে। জেলা আধিকারিকরা জানান, এখানে এক হাজার মামলা রয়েছে। এছাড়াও মুর্শিদাবাদ (৬৬০), উত্তর দিনাজপুর (৩১৫), পূর্ব মেদিনীপুর (৭০০), পশ্চিম মেদিনীপুরে (৮৩৭), পুরুলিয়ায় (৫৫১) এত মামলা ঝুলে থাকায় ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী।
এদিকে, জেলাগুলির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে কত শতাংশ পরিদর্শন হয়েছে, সেই রিপোর্ট জানার পর অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। পুরুলিয়ার জেলা আধিকারিকরা যখন বলেন, তাঁরা প্রাথমিকে ৫৩ এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৪৪ শতাংশ স্কুলে পরিদর্শন করেছেন, তা শোনার পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। আবার দক্ষিণ দিনাজপুরে ৫০ শতাংশের নীচে পরিদর্শন হয়েছে কেন তারও কৈফিয়ত চান তিনি। কিন্তু সেরকম কোনও সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় কড়া হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পার্থ বলেন, ঘরে বসে রিপোর্ট দিলে হবে না। স্কুলে স্কুলে গিয়ে সেখানকার অবস্থা দেখতে হবে। সময়ে সময়ে সেই রিপোর্ট দফতরে পাঠাতে হবে।