লোকসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, সিবিআইয়ের অন্দরমহলের ডামাডোল যেন ততো বেশি করে প্রকট হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থার শীর্ষকর্তাদের মধ্যে চলা অশান্তিতে এখনও সরগরম দেশ। সেই জট পুরোপুরি কাটার আগেই ছন্দা কোছার মামলায় সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে এ নিয়ে টুইটও করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, সিবিআইয়ের কাজকর্ম নিয়ে ঝুশি নন তিনি। তাঁর মতে, সিবিআই তদন্তে ‘পেশাদারিত্ব’ না দেখিয়ে ‘অ্যাডভেঞ্চার’ করতে নেমেছে।
টুইটারে জেটলি তাঁর নিজের বক্তব্য জানানোর পরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর টুইটগুলি রিটুইট করেন আপাতত জেটলির মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। এবং ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বদলি করে দেওয়া হল ছন্দা কোছার মামলার তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিক সুধাংশু ধর মিশ্রকে। ‘ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড সিকিউরিটিজ ফ্রড’ শাখায় ছিলেন সুধাংশু। তাঁকে রাঁচির ‘ইকনমিক অফেন্সেস’ শাখায় বদলি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের অধিকর্ত্রী ছন্দা কোছারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভিডিওকন শিল্পগোষ্ঠীকে ৩,২৫০ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাদের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিবিআই দাবি করেছে, ভিডিওকনকর্তা বেণুগোপাল ধুত মোটা টাকা লগ্নি করেছিলেন ছন্দার স্বামী দীপক কোছারের সংস্থায়। ফলে ভিডিওকন ঋণ পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন দীপক কোছার। ওই অভিযোগের জন্যই আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের এমডি পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন ছন্দা কোছার। গতবছর থেকেই বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছিল সিবিআই। অবশেষে বুধবার এফআইআর রুজু হয়েছিল ওই তিনজনের নামে। আর তারপরেই সিবিআইয়ের তদন্তের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জেটলি। একের পর এক টুইট করে সিবিআই আধিকারিকদের ‘রোমাঞ্চকর’ তদন্তের পরিবর্তে লক্ষ্য স্থির করার পরামর্শ দেন তিনি।
জেটলি লেখেন, ‘পেশাদার তদন্তের নিশানা দোষীকে ধরা এবং নিরপরাধকে বাঁচানো। সেখানে জনস্বার্থের দিকে নজর রেখে দোষীর সাজা সুনিশ্চিত করা হয়। রোমাঞ্চকর তদন্তের জন্য এখানে দোষীদের সাজার শতকরা হাল খুব হতাশাজনক। আগাম অনেককিছু ধরে নেওয়ার ফলেই তদন্তে পেশাদারিত্বের অভাব।’ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ওই তদন্তকারী সংস্থাকে তাঁর পরামর্শ, ‘তদন্তে রোমাঞ্চ এড়িয়ে যাওয়া উচিত। মহাভারতে যেমন অর্জুনের লক্ষ্য স্থির ছিল, তেমনই সিবিআইয়েরও লক্ষ্য স্থির করে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত।’ পীযূষের পাশাপাশি জেটলির টুইটগুলি রিটুইট করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমনও।
টুইটগুলি নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। সরকারি এক আধিকারিক দাবি করেছেন, ‘জেটলি নিছক পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করছেন না। এখানে সরকারেরও কিছু করণীয় নেই।’ তবে তদন্তকারী আধিকারিককে তারপরেই বদলি করায় পরোক্ষ হস্তক্ষেপের প্রশ্ন যেমন উঠেছে, তেমনই সামগ্রিকভাবে সিবিআই নিয়ে ডামাডোল আরও প্রকট হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, কোছারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই অফিসারকে।
ঘটনাচক্রে, জেটলির টুইটের অব্যবহিত আগেই সিবিআইয়ের কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি লেখেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘটনা ঘটেই চলেছে। দেশের বিরোধীদের অপদস্থ করতে বিজেপি এবং তার শরিকেরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে লেলিয়ে দিচ্ছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ পূর্ব থেকে পশ্চিম সবাই বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার অখিলেশ যাদব, বহেন মায়াবতীজি, কাউকেই বাদ দেওয়া হচ্ছে না। মস্তকহীন এজেন্সি এখন মেরুদণ্ডহীন বিজেপিতে পরিণত হয়েছে।’ মমতা টুইটে এ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘বিজেপি কি ভয় পেয়ে গেছে? বিজেপি কি মরিয়া হয়ে উঠেছে?’ সিবিআই নিয়ে তাঁর সেই অভিযোগই এবার বৈধতা পেল জেটলির মন্তব্যে।