দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে ‘আধুনিকতম প্রযুক্তি’র প্রোটোন ক্যান্সার থেরাপি সেন্টার গড়ে উঠল চেন্নাইয়ে। যা ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাবে দেশকে। সৌজন্যে দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী অ্যাপোলো। জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৩৫০ কোটি মানুষের জন্য ভারতের এই প্রথম প্রোটন থেরাপি সেন্টার চালু করছে অ্যাপোলো। আজ, শুক্রবার দেশের উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর হাতে উদ্বোধন হতে চলেছে কেন্দ্রটি। বৃহস্পতিবার এ কথা ঘোষণা করেন খোদ অ্যাপোলো গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ডাঃ প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি।
তিনি জানান, ‘৩৫ বছর আগে অ্যাপোলো হাসপাতাল তৈরির সময় আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে, দেশবাসীকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা করানোর জন্য যেন বিদেশে ছুটতে না-হয়। সেই উদ্দেশ্যেই এই অত্যাধুনিক প্রোটন থেরাপি নিয়ে এলাম আমরা। প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকা খরচ করে এই স্টেট অফ দি আর্ট প্রোটন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। শুধু ভারতই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় কোথাওই এই প্রযুক্তি নেই। আড়াই বছর সময় লেগেছে এর ছাড়পত্র পেতে। এই রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে ফুসফুস, লিভার থেকে শুরু করে মাথা, ঘাড়, চোখ-সহ অজস্র ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব হবে প্রায় কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।’
কী এই প্রোটন থেরাপি? নবনির্মিত প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারের অধিকর্তা রাকেশ জালালি বলেন, ‘এক্সরে-র বদলে প্রোটন কণা ব্যবহার করে রেডিয়োথেরাপি দেওয়া হয় এক্ষেত্রে। পজিটিভ চার্জ থাকা প্রোটন কণা সরাসরি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলিতে আক্রমণ করে শুধুমাত্র সেই কোষগুলোকেই ধ্বংস করে। তাই এই প্রযুক্তির সাইডএফেক্ট অনেক কম।’ টার্গেটেড কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হলেও অনেক সময় দেখা যায়, রোগীর শরীরে নানা কুপ্রভাব পড়ছে। রেডিয়েশনে ক্যান্সার একবার নির্মূল হলেও, নতুন করে ক্যান্সারের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থেকে। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে যেখানে ক্যান্সার নিরাময়ের হার সবচেয়ে বেশি, সেখানে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের কোয়ালিটি লাইফ আরও ভালো হবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
অ্যাপোলো চেন্নাইয়ের সিনিয়র মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট টি রাজা বলেন, ‘আজ থেকে কুড়ি বছর আগে দেড় বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ের ব্রেন টিউমার নিরাময় করেছিলাম আমি। মেয়েটির টিউমার আর ফিরে না এলেও, ওর হরমোনাল এবং ডেভেলপমেন্টাল কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয় রেডিয়েশনের কারণে। এখন ওকে যখনই আমি দেখি, মনে হয় প্রোটন থেরাপি তখন থাকলে হয়তো ওর মস্তিষ্কের অন্যান্য কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কোয়ালিটি অফ লাইফটা নষ্ট হত না।’ হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে ৩৫ জন রোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, প্রোটন থেরাপি প্রয়োগ করার জন্য।