দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার আন্দিলে ফেলুকওয়েকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। তার সেই মন্তব্য ধরা পড়ে স্ট্যাম্পে থাকা মাইক্রোফোনে। সেটা শোনার পর থেকে ক্রিকেট বিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শাস্তিরও দাবি জানান কেউ কেউ। অবশ্য এমন আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন সরফরাজ।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডু প্লেসিস জানিয়েছেন তিনি ও তার দল সরফরাজ আহমেদকে ক্ষমা করেছেন। কারণ সরফরাজ ‘স্যরি’ বলেছেন, ‘আমরা তাকে ক্ষমা করেছি। কারণ সে দুঃখিত বলেছে। সে ক্ষমা চেয়েছে এবং নিজের দোষ স্বীকার করেছে। এটা এখানেই শেষ। এখন আমাদের হাতে আর কিছু নেই। বাকি বিষয়টা আইসিসি দেখবে।’
‘যখন আপনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসবেন তখন আপনাকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমি নিশ্চিত সরফরাজ ঠিক এমন কিছু বলেননি কিংবা বোঝাতেও চাননি। কিন্তু সে তার দোষ স্বীকার করেছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি এটার ফল কী আসে। আমরা বিষয়টাকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। তবে সরফরাজ এমন ঘটনার পর পরই ক্ষমা চেয়েছে এবং সে যে ব্যথিত সেটা বোঝা যাচ্ছে। তাই আমরা তাকে ক্ষমা করতেই পারি। তবে এটার মানে এটা নয় যে বিষয়টা আমরা ভুলে যাচ্ছি।’
ফেলুকওয়ে অবশ্য সরফরাজের মন্তব্য খেয়ালই করেননি। কারণ, তিনি তো আর উর্দ বোঝেন না। তাই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি। এমনটাই জানিয়েছেন ডু প্লেসিস, ‘অ্যান্ডি (ফেলুকওয়ে) আমাকে জানিয়েছে যে সে বিষয়টা খেয়াল করেনি। এমন সে মনে করেছে বিষয়টা ঠিক তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি। সেটার অবশ্য আরো একটি কারণ থাকতে পারে। সেটা হল ভাষাগত সমস্যা। আমরা তো আর তাদের ভাষা বুঝতে পারি না।’
আইসিসি অবশ্য ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পেয়েছে ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালের কাছ থেকে। আইসিসি এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ঘটনাটির প্রকৃতি বিচার করে লিগাল কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয় তারা কী সুপারিশ করে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালে এই দক্ষিণ আফ্রিকাই ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হয়েছিল তাঁদের বর্ণবাদের জন্য। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ডের ছাড়া সব ক্রিকেট খেলিয়ে দেশকে বয়কট করা এবং দলে স্রেফ শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারদের সামিল করা, প্রোটিয়ো বোর্ডের এই নীতির বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেয় আইসিসি। ২১ বছর পর্যন্ত কোনও ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেনি তাঁরা। যার ফলে গ্রেম পোলক, ব্যারি রিচার্ডদের মতো ক্রিকেটারদের কেরিয়ার শেষ হয়ে যায় অচিরেই। দুই দশক পর, ১৯৯১ সালে ইডেনে ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে সেই শাপমোচন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। আলি বাখারের হাত ধরেই ক্রিকেট সার্কিটে ফিরতে পেরেছে তাঁরা। সেই দেশেই এমন বর্ণবিদ্বেষী ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সেখানে প্রোটিয়ো অধিনায়ক যেভাবে গোটা বিষয়টিকে দেখলেন এবং ক্ষমা প্রদর্শন করলেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।