একজনের বয়স ৮০ পেরিয়েছে। অন্যজনের ৭০ ছুঁই ছুঁই। তবে তাতে কী? ভারতীয় চলচ্চিত্রের আকাশে বিরাজমান দুই নক্ষত্র, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নাসিরুদ্দিন শাহ এখনও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এবার এই দুই কিংবদন্তী অভিনেতাকেই প্রথমবারের জন্য দেখা যাবে এক ছবিতে! সৌমিত্র-নাসির জুটিকে মাথায় রেখেই তাঁর ছবির গল্প বুনে ফেলেছেন পরিচালক শৈবাল মিত্র। ছবির নাম ‘দেবতার গ্রাস’।
জানা গেছে, ১৯৫০ দশকে জেরোম লরেন্স ও রবার্ট ই লিয়ের লেখা আমেরিকান নাটক ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে লেখা হয়েছে এই ছবির গল্প। সমকালীন সময়ের অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ পরিচালককে অনেক দিন ধরেই ভাবিয়েছে। সেই সময়ে তিনি ওই নাটকটি পড়েন। ওই নাটকের আধারে স্ট্যানলি ক্রেমারের ছবিটিও দেখেন। সে সময়েই তাঁর মনে হয়, এই গল্পটি নিয়ে ছবি করলে একটি চরিত্রের জন্য নাসিরুদ্দিন যথাযথ। কিন্তু অভিনেতা রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে তাঁর মনে সংশয় ছিল।
জানা গেছে, শৈবাল প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে একটি টেক্সট করেন তাঁকে। যে এরকম একটি ছবি তৈরি করতে চাইছেন, যেখানে নাসিরের সংলাপ ইংরেজিতে থাকবে। নাসির সঙ্গে সঙ্গে চিত্রনাট্য চেয়ে পাঠান। সেই চিত্রনাট্যে তাঁর কিছু পরামর্শ যোগ করেন। পরিচালকের কথায়, ‘নাসিরের আসলে সৌমিত্রদার সঙ্গে অভিনয় করার বহুদিনের ইচ্ছে ছিল। তার ওপর এই নাটকটাই তিনি গত ২০ বছর ধরে স্টেজ করবেন বলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। চিত্রনাট্যে কিছু নিজের পরামর্শ দেওয়ার পর ফাইনাল চিত্রনাট্য ওঁর খুব পছন্দ হয়। তারপরই হ্যাঁ’ করে দেন। এটা আমার কাছে এক অর্থে অভানীয় ছিল।’
পরিচালক জানাচ্ছেন, হিল্লোলগঞ্জের প্রেক্ষাপটে ছবির গল্প সাজানো হয়েছে। সেখানকার এক প্রগতিশীল শিক্ষকের সঙ্গে ধর্ম ও রাজনীতির টানাপড়েন, স্বাধীন চিন্তার সঙ্গে মৌলবাদী চিন্তার দ্বন্দ্ব, মানুষের জনক ঈশ্বর না বিবর্তনবাদ… এমন নানাবিধ প্রশ্ন ও পাল্টা প্রশ্ন ঘিরে এগিয়েছে ছবির গল্প। চরিত্ররা বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি তিনটি ভাষায় কথা বলবে। ফলে বাংলা ছবি না বলে মাল্টিলিঙ্গুয়াল বলা ভালো। কারণ ছবিটি বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে।
পরিচালক আরও জানান, মূল নাটক থেকে সরে না এলেও ‘দেবতার গ্রাস’-এ কিছু নতুন দৃশ্য যোগ করা হয়েছে। যেভাবে ‘গণশত্রু’ তৈরি হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘আমরা ছবিটি ভারতীয় পার্সপেকটিভ থেকে করেছি।’ শৈবাল নিজে পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও তিনি জানাচ্ছেন বাকি কাস্টের সবাই তাঁদের নিজস্ব সাজেশান দিয়েছেন। সৌমিত্র-নাসির তো বটেই। সবার সিন্ধান্তে নিশ্চিত হয়েই শৈবালের মনে হয় যে এবার এগোনো যেতে পারে।
এই দু’জন কিংবদন্তী ছাড়াও ছবিতে অন্যান্য ভূমিকায় রয়েছেন কৌশিক সেন, পার্থপ্রতিম মজুমদার, শুভ্রজিত দত্ত, অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, অনসূয়া মজুমদার প্রমুখ। সঙ্গীতের দায়িত্ব সামলাবেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। জানা গেছে, কৌশিক দিল্লীর এক সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। ‘একদিকে নাসিরুদ্দিন শাহ – যাঁকে শুধুমাত্র একজন অভিনেতা বলা যায় না, তিনি তার থেকে অনেক বেশি কিছু। আর উল্টোদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি আমার আদর্শ, রোল মডেল আর গুরুদেব। এর সঙ্গে আছেন শৈবালদা। সব মিলিয়ে আমি খুবই উত্তেজিত,’ বলছেন কৌশিক।
শৈবাল জানান, শহরের এক স্টুডিয়ো ফ্লোরেই শ্যুট করা হবে ছবির একটা অংশ। কারণ সৌমিত্রর শরীরের অবস্থার জন্য তাঁকে বেশি দূরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। বাকিটা শ্যুট হবে আউটডোরেই। যার জন্য লোকেশনের খোঁজ চলছে। ‘আসলে সৌমিত্র-নাসির – এই দু’জনের ডেট ম্যাচ করাটা একটা বিশাল ব্যাপার। সেটা মাথায় রেখেই এগোচ্ছি’, বলছেন শৈবাল।
আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘আমার চিত্রনাট্যটা খুব ভালো লেগেছে। তা ছাড়া, নাসিরুদ্দিন শাহের সঙ্গে অভিনয় করব – এ তো আমার কাছে বিশাল ব্যাপার। আমি ছবিটার জন্য মুখিয়ে আছি,’ বলছেন সৌমিত্র। নাসিরুদ্দিনের কথায়, ‘চিত্রনাট্য খুব বলিষ্ঠ। আর শৈবালকে অনেক দিন ধরেই চিনি।’