দেশ থেকে মোদী ম্যাজিক যে এখন ‘ভ্যানিশ’ তা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল গোবলয়-সহ ৫ রাজ্যের ভোটের পরেই। প্রতিটি রাজ্যেই ভরাডুবি হয়েছিল পদ্মের। তাই চাপ তো রয়েছেই, তার ওপর উত্তরপ্রদেশে মায়া-অখিলেশ জোট ঘোষণার পর রীতিমতো আতঙ্কিত নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। ৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে জোটসঙ্গী আপনা দলকে নিয়ে গত বার ৭৩টি আসন জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এবার বুয়া-বাবুয়া জোট ঘোষণায় ওই রাজ্যে দল খড়কুটোর মতো ভেসে যায় কি না, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে গেরুয়া শিবির।
যদিও শেষ অস্ত্র হিসাবে রামমন্দিরে ভরসা রাখার পক্ষপাতী সঙ্ঘ পরিবার। অধ্যাদেশ এনে মন্দির নির্মাণের পক্ষপাতী তারা। কিন্তু অনেকের ধারণা, আজকের দিনে রামমন্দিরের মতো বিষয় গোটা রাজ্যে আদৌ প্রাসঙ্গিক নয়। রাজ্যে খুব বেশি হলে চার থেকে পাঁচটি আসনে প্রভাব ফেলতে পারে রামমন্দির। পরিবর্তে জাত পাতের অঙ্কে এসপি-বিএসপিকে টক্কর দিতে রণকৌশল তৈরির ওপরে জোর দিতে চাইছেন মোদী-শাহেরা। কোনও কেন্দ্রে যাদব না দলিত, বিরোধী জোট কোন সম্প্রদায়ের প্রার্থী দিতে চলেছে, তা মাথায় রেখে এখন পাল্টা জাতপাতের অঙ্কেই বিরোধীদের মোকাবিলা করতে চায় বিজেপি।
এতদিন বিজেপির তুরুপের তাস ছিল মেরুকরণ। তবে সমস্যা হল গত লোকসভার আগে গোটা রাজ্যে যে ভাবে মেরুকরণের হাওয়া ছিল, এ বার তা রয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু আসনে। আসলে বিপক্ষে যদি কোনও মুসলিম প্রার্থী থাকে, তবেই মেরুকরণের রাজনীতি সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এতে সার্বিক ভাবে সব আসনে মেরুকরণের প্রভাব পড়া মুশকিল। তাই ধর্মীয় মেরুকরণের অস্ত্র ছেড়ে এখন জাতের অঙ্কের ভিত্তিতে প্রার্থী নামিয়ে বাজিমাত করতে চাইছেন মোদী-শাহরা।
অন্যদিকে, ফুলপুর আর গোরক্ষপুরের নির্বাচনেই স্পষ্ট, এসপি-বিএসপি জোট হলে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয় অনিবার্য। আর উপনির্বাচন থেকে এ-ও স্পষ্ট, দু’দলের জোট বার্তা একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছেছে। সেই কারণেই এক দলের সমর্থক স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অন্য দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। যা চিন্তা বাড়িয়েছে বিজেপির। আবার এসপি-বিএসপির মূল শক্তি হল জাত ভিত্তিক ভোটব্যাঙ্ক। এবারেও যদি বিএসপি দলিত, সপা যাদব ও কংগ্রেস উচ্চবর্ণের ভোটে বড়সড় ভাগ বসায়, তা হলে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির হাতে যে কিছুই পড়ে থাকবে না, সেটা বিলক্ষণ বুঝছে গেরুয়া শিবির। তাই মায়া-অখিলেশের জোট ঘোষণা হতেই জাতপাতের অঙ্ক কষতে বসেছেন মোদী-শাহরা।