প্রথমে বারাসত, তারপর খাস কলকাতা এবং হাওড়া। ধর্মঘটের দু’দিনই ধর্মঘটীদের তাণ্ডবের শিকার স্কুল পড়ুয়ারা। ধর্মঘটের প্রথম দিনে বারাসাতের চাঁপাডালি মোড়ে স্কুল বাস দাঁড় করিয়ে ভাঙচুর করে ধর্মঘটিরা। বিভিন্ন মহলের নিন্দা, অভিযুক্তদের গ্রেফতার, প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিতেও বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির কোনও চৈতন্য হয় নি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও কলকাতার রাজাবাজারে একটি পুলকারে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে। জানলার কাচ ভেঙে গুরুতর জখম হন এক ছাত্র। হাওড়ার শানপুর মোড়ের একটি বাসে এক ধর্মঘটীর ছোঁড়া পাথরে ২ স্কুল পড়ুয়া ও এক যাত্রী জখম হন।
চোখের সামনে এমন ভাঙচুরের ঘটনা দেখে বাকরুদ্ধ খুদে পড়ুয়ারা। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক। বারবার মা-বাবা তাদের বোঝাচ্ছে, লোকগুলো মারতে আসেনি। তারা শুধু গাড়ির কাচ ভেঙেছে। তবু ঘটনাটি দাগ কেটেছে চার থেকে ছয় বছরের কচি মনে। বিকেলে ছলছল চোখে অনেকে মাকে বলেছে, ‘আমি আর স্কুল যাব না। ওরা যদি আবার আমাদের মারতে আসে’!
ধর্মঘটের প্রথম দিন ধর্মঘটিরা বারাসাতের চাঁপাডালি মোড়ে স্কুল বাসে তাণ্ডব চালায়। লাঠি দিয়ে মেরে ভেঙে ফেলে কাচের জানলা। আতঙ্কে বাস থেকে নেমে পড়েন স্কুল পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকেরা। তারপর বাসের ভেতর চলে ধর্মঘটীদের তাণ্ডব। চাঁপাডালি মোড়ে ফরোয়ার্ড ব্লক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখনই বাস আটকে চলে ভাঙচুর।
দ্বিতীয় দিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় কলকাতার রাজাবাজারে। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ ধর্মঘটের সমর্থনে কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট ধরে আসা একটি মিছিল রাজাবাজার মোড়ের কাছে একটি অ্যাপ-ক্যাবের পথ আটকায়। মিছিলের মধ্যে থেকে উইকেট, লাঠি দিয়ে ক্যাবটিতে ভাঙচুর চালানো হয়। ক্যাবের পিছনেই ছিল রাজাবাজার এলাকার একটি স্কুলের পুলকার। ধর্মঘটীরা এর পরে ওই পুলকারের উপরে চড়াও হন। উইকেট, লাঠি দিয়ে মেরে পুলকারের ‘উইন্ড স্ক্রিন’ ভেঙে দেওয়া হয়। গাড়িতে তখন এক অভিভাবকের পাশাপাশি অন্তত ১৪টি শিশু ছিল বলে পুলিশের দাবি।
অভিযোগ, পড়ুয়ারা এবং তাদের অভিভাবকেরা ছেড়ে দেওয়ার আর্তি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি ধর্মঘটিরা। অভিভাবক পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি হাত জোড় করে বারবার ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও ধর্মঘটীরা শোনেননি। দলীয় স্লোগান দিতে দিতে শিশু পড়ুয়াদের চোখের সামনেই গাড়িটির কাচ একের পর এক ভেঙে ফেলেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, পুলকার-সহ তিনটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ২১ জনকে আটক করা হয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘সিপিএম এখন হতাশ একটি রাজনৈতিক দল। সাধারণ মানুষও তাদের উপরে বিরক্ত। এই আচরণ সেই হতাশারই বহিঃপ্রকাশ’।