একজন রাজনীতির মানুষ। অন্যজন অর্থনীতির। দুজনের ক্ষেত্র আলাদা কিন্তু দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ এক। প্রথমজন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। অসহিষ্ণুতা এবং সৌজন্যহীনতার পরিবেশ নিয়ে ভিন্ন দুই অনুষ্ঠানে কার্যত সমমত প্রকাশ করলেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে এল ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক সৌজন্যের প্রসঙ্গ। যা সমর্থন করলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। অন্যদিকে অমর্তের বক্তৃতায় উঠে এল কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও অসহিষ্ণুতার কথা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দীক্ষান্ত ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিহাসকে যেন রাজনৈতিক ভাবে পরিবর্তন করা না হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মাঝখানে ছোট ছোট দেওয়াল গুলি ভেঙে ফেলতে হবে। একতাই সম্প্রীতি। ইতিহাস, বিজ্ঞান নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সৌজন্য যেন থাকে’।
অন্যদিকে এশিয়াটিক সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে অমর্ত্য বলেন, ‘নীরব থাকা নয়, বরং কথা বলতে হবে। সামগ্রিক ভাবে অসহিষ্ণুতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি’। পাশাপাশি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহকে যে ভাবে বাক্যবাণে বিদ্ধ করছে গেরুয়া শিবির, এ দিন তারও সমালোচনা করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করেছেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা যুক্তিগ্রাহ্য এবং তথ্যভিত্তিক। আমি পূর্ণ সমর্থন করি। এই কেন্দ্রীয় সরকার লাগাতার ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় কিংবা কিছুদিন আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, সেখানে হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস তৈরি করতে গিয়ে তথ্যের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।’ হাবিবের আরও অভিযোগ, এই প্রথম নয়, প্রথম এনডিএ সরকারের আমলেও একই চেষ্টা করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ইতিহাস কংগ্রেসে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা ইতিহাস লিখতে শুরু করলে তথ্যের বিকৃতি ঘটবেই। এবং সেটাই ঘটছে। ইতিহাসের কাজ সত্যকে সামনে আনা। আমি ভুল করলেও ইতিহাস সেই ভুল চিহ্নিত করে দেবে।’ ইতিহাস কংগ্রেসে গান্ধীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘গান্ধীকে যে মেরেছিল, তাকেই এখন বরেণ্য বলে দেখানো হচ্ছে। এটাই ইতিহাসের বিকৃতি।’ ওই একই সময়ে কলকাতার এক অনুষ্ঠানে হাবিবও মন্তব্য করেছিলেন, ‘বিকৃত তথ্য ইতিহাস নয়, গল্প। এখন সেটাকেই ইতিহাস বলে চালানোর চেষ্টা চলছে।’