এ কোন আচ্ছে দিন, রাতের চেয়েও অন্ধকার! অর্থনীতি শিকেয় উঠেছিল আগেই। এবার মোদীর আচ্ছে দিনের ঠেলায় নাভিশ্বাস উঠছে দেশের। শিল্প ও কৃষি, এই দুই ক্ষেত্রে এমনই ‘বিকাশ’ হয়েছে যে উৎপাদনই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম! সোমবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক প্রকাশিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭.২ শতাংশ। যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাসের (৭.৪ শতাংশ) থেকেও কম।
প্রসঙ্গত, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ। কিন্তু দেশের শিল্প মহলের অস্বস্তি বাড়িয়ে ক্রমশই ধস নামতে থাকে সেই বৃদ্ধির হারে। ফলে পরের তিন মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের হিসেবে সেই বৃদ্ধির হার কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৭.১ শতাংশে। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের রিপোর্টে তখন স্পষ্ট বলা হয়েছিল, শিল্প ও কৃষিতে মন্দার কারণেই বৃদ্ধির হার ক্রমশ নিম্নগামী।
বিরোধীদের অভিযোগ, বৃদ্ধির হারকে বাড়িয়ে দেখাতে জিডিপি মাপার ফিতেই বদলে দিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের পূর্বাভাস সত্যি হলে, সেই নতুন হিসেবের নিয়মেও নিজেদের জমানায় মাত্র এক বারই ৮ শতাংশের গণ্ডি ছাড়াতে পারবে তারা। সেই ৮ শতাংশ, যা সহজেই ছোঁয়া সম্ভব বলে গত লোকসভা ভোটের আগে স্বপ্ন ফেরি করতেন নরেন্দ্র মোদী।
দিল্লীর কুর্সি দখলের আগে ৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধিকে জলভাত বলেই দাবি করতেন মোদী, অথচ ৫ বছরে সেই ৮ শতাংশ দুর্লভ থেকে গেল কেন? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। আবার, গত লোকসভা ভোটের আগে মোদীর দাবি ছিল, মনমোহন সরকারের দুর্নীতি আর নীতি পঙ্গুত্বেই বসে যাচ্ছে বৃদ্ধির চাকা। বিরোধীদের প্রশ্ন, এখন ‘চৌকিদারের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারে’ও বৃদ্ধি শ্লথ কেন?
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের সাফাই, গত বারের বৃদ্ধির (৬.৭শতাংশ) তুলনায় এ বার পূর্বাভাস অনেকটাই বেশি। শুধু তা-ই নয়, মূলত কৃষি ও উৎপাদন ক্ষেত্রের উন্নতির কারণেই নাকি মাথা তোলার ইঙ্গিত দিচ্ছে বৃদ্ধি! যদিও স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, খনন, পরিবহণ, যোগাযোগের মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার কমতে পারে।
এখন কথা হচ্ছে, দিল্লীর মসনদ দখলের লক্ষ্যে গতবার যে বছরে দু’কোটি কাজ তৈরির স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন মোদী, দাবি করেছিলেন, ভাল বৃদ্ধির হারই তার চাবিকাঠি, এবার ভোটে বৃদ্ধির রিপোর্ট কার্ড তাঁর হাতে থাকবে, তখন সেটি আর তেমন জুতসই হবে কি? এ নিয়ে মুখু কুলুপ এঁটেছে কেন্দ্র। অন্যদিকে, মনমোহন সিং থেকে শুরু করে রঘুরাম রাজন, সকলের মতেই নোটবন্দী আর জিএসটির জোড়া ধাক্কাই কাবু করেছে বৃদ্ধিকে। ৫ বছরের মেয়াদ শেষে যে তা জোর গলায় অস্বীকার করা যাবে না, তাও ভালমতই জানে মোদী সরকার। ফলে ‘আচ্ছে দিন’ শেষে মোদীর ফেরি করা স্বপ্ন যে অধরাই থেকে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।