দেশ জুড়ে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং সৌজন্যহীনতার পরিবেশ নিয়ে নাম না করেও অত্যন্ত সুললিত ভাষায় গেরুয়া শিবিরকে বিঁধলেন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। তবে শুধু গেরুয়া শিবিরকে বিদ্ধ করাই নয়, এহেন পরিস্থিতি থেকে দেশকে বের করে আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বড় ভূমিকা পালন করার অনুরোধও জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ নিতে হবে মমতাকেই। একমাত্র তিনিই পারেন এই মুহূর্তে দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে।
সোমবার নজরুল মঞ্চে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি প্রদান করা হয় গোপালকৃষ্ণকে। ওই মঞ্চ থেকেই প্রাক্তন রাজ্যপাল বলেন, ডি-লিট সম্মান দায়িত্ব বাড়ায়। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই বলছি, বাক স্বাধীনতা, চিন্তাভাবনা আর লেখার মাধ্যমে মত প্রকাশ যেন নিরুপদ্রবে চলতে পারে তা দেখতে হবে। ভয়ের পরিবেশ গণতন্ত্রের পক্ষে সবচেয়ে ভয়াবহ। আমরা যাতে নির্বিঘ্নে লেখার মাধ্যমে মত প্রকাশ করতে পারি, যাতে কেউ আমাদের বাধা দিতে না পারে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
গতকালের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনিও নাম না করে গেরুয়া শিবিরকে বার্তা দিতে বলেন, আরও বেশি করে জ্ঞানের আলো জ্বালতে হবে, যাতে ভেদাভেদের অন্ধকার মুছে যায়। ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের বলব, দেশের ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই। দেশের ইতিহাস যেন পাল্টানো না হয়। রাজনৈতিক মতাদর্শকে সামনে রেখে তা করাটা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা যাতে খর্ব না হয়। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যেন না থাকে, দেখতে হবে তাও। যদিও একতার পীঠস্থান বাংলায় এসব হয় না। এখানে একতা এবং সম্প্রীতিই প্রথা।
মমতার সুরে সুর মিলিয়েই প্রাক্তন রাজ্যপাল বলেন, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির পীঠস্থান। বাংলাই পারে এই ভয়ের পরিবেশ থেকে দেশকে বের করে আনতে। এরপরই মঞ্চে বসে থাকা মমতার দিকে ফিরে গোপালকৃষ্ণের আর্জি, চিফ মিনিস্টার ম্যাডাম, আপনাকে তাতে বড় ভূমিকা নিতে হবে। অন্ধকার চিরে স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ টিকিয়ে রাখার এই সফরে মশালবাহক হতে হবে আপনাকেই। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভয় ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না।
প্রসঙ্গত, বাম আমলে রাজ্যপাল থাকালীন নন্দীগ্রাম গণহত্যা পর্বে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গোপালকৃষ্ণ বলেছিলেন- হাড় হিম করা সন্ত্রাস। এবার কেন্দ্রের শাসকবৃত্তকে নিশানা করে তাঁর ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অন্যদিকে, নিজের ভাষণের শেষ পর্বে রাজনৈতিক সৌজন্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার সঙ্গে কারও রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু তা বলে সৌজন্য থাকবে না! তিনি যে সৌজন্যহীন রাজনীতিকে বিন্দুমাত্র সম্মান করেন না সে কথা সাফ জানিয়ে দেন মমতা।