২০১১ সালে মিশরে যখন দাউদাউ করে জ্বলছিল বিপ্লবের আগুন, ওই সময়েই সে দেশের সাধকেরা কলকাতায় এসে শুনিয়েছিলেন বন্ধুত্ব রক্ষার গান। ভালবাসার মাধ্যমে সমস্যা সঙ্কট অতিক্রম করার বার্তা বিশ্বের নানা অঞ্চলের গানেই বারবার উঠে এসেছে। সেই পথে হেঁটেই নবম বারের জন্যে সুরের মূর্ছনায় ভাসতে চলেছে মোহরকুঞ্জ। বাংলা নাটক ডট কম–এর উদ্যোগে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শহরে বসছে দেশ–বিদেশের সুফি সঙ্গীতের আসর ‘সুর জাহান। এই অনুষ্ঠান চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷
মিশরের মওলাদের দরবেশি নাচের সঙ্গে মিশবে বাংলার বাউলের ভালবাসার সুর। স্পেনের লিয়োনা অ্যান্ড সেরেনা স্ট্রিংস–এর সঙ্গী হবে দরগার কাওয়ালি। তৈরি হবে ‘ফিউশন’। শুরুতে এই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘সুফি সূত্র’। ২০১১ থেকে যার পথ চলা শুরু। আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের ২৭টি দেশ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। প্রতি বছর পাঁচ থেকে ছ’টি আন্তর্জাতিক ব্যান্ড এতে যোগ দেয়। যারা দিনে নিজেদের সংস্কৃতি আদানপ্রদানের কর্মশালা এবং সন্ধেয় ‘মিউজিক কনসার্ট’–এর আয়োজন করে। নব প্রজন্মের শিল্পীদের কাছে যা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানে থাকবেন ‘ওমেক্স’ লাইফ টাইম পুরস্কার বিজয়ী মারিও লুসিও ও তাঁর ব্যান্ড। থাকছে স্পেনের বিখ্যাত ‘লিয়োনা অ্যান্ড সেরেনা স্ট্রিংস’, সাইপ্রাসের ‘মঁসিয়ে দোমানি’, মিশরের ‘মওলাউইয়া’, হাঙ্গেরির ‘বাব্রা’ ব্যান্ড। উপরি পাওনা হিসেবে থাকছে হস্তশিল্পের সম্ভার। শিল্পীদের প্রচেষ্টায় নানা জিনিসে ফুটে উঠবে ভারতীয় সংস্কৃতি। গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া নানা শিল্পসংস্কৃতির পরিচয় ঘটানো হবে এই মেলায়।
কলকাতার পর গোয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি হবে এই অনুষ্ঠান। তিনদিন ব্যাপী এই সঙ্গীতের আসরে জ্যাজ, পপের সঙ্গে সঙ্গীতপ্রেমীরা মাতবেন পল্লীগীতি, ভাটিয়ালির সুরে। থাকবে যন্ত্রসঙ্গীতের মূর্ছনা। চেলো, ইলেকট্রিক গিটারের পাশাপাশি বাজবে বেহালা, দোতারা। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এই মেলবন্ধনে বিদেশের গায়ক ও সঙ্গীত সংস্থার সঙ্গে যোগ দেবেন ভারতীয় শিল্পীরাও। মাঠের এক এক কোনায় নিজের সুর নিয়ে মেতে উঠবেন ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি শিল্পীরা৷ সুরের দুনিয়ায় দর্শক শ্রোতাদের থাকবে বেছে নেওয়ার সুযোগ৷ যার যেমন পছন্দ৷ হিংসা-হানাহানি ভুলে সম্প্রীতির বন্ধনে মানুষকে বাঁধতে তাই শান্তির সুরে ভাসতে চলেছে চেনা মোহরকুঞ্জ।