৮ ও ৯ জানুয়ারি ধর্মঘট ডেকেছে শ্রমিক সংগঠনেরা। এদিকে ওই দুদিন পড়েছে জয়েন্টের পরীক্ষা। প্রায় ৪২ হাজার পরীক্ষার্থী ওই দুদিন পরীক্ষায় বসবেন। কিন্তু ধর্মঘটীদের জেরে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনই এখন তাঁদের কাছে সমস্যার। সব মিলিয়ে ধর্মঘটের ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা।
ইতিমধ্যে ধর্মঘটের দিন বদল করার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন এক আইনজীবী। তবে আদালত সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছে। এদিকে ট্রেড ইউনিয়ান নেতারা সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছে, ধর্মঘট ডাকা হয়েছে সেপ্টেম্বরে। পরীক্ষার দিন ঠিক হয়েছে পরে। বোর্ডও এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি।
শহরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার্থীরা ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘ধর্মঘটী আর বোর্ডের এই অনড় মনোভাবের মাঝে পড়ে গিয়েছি আমরা। পরীক্ষার্থীরা সাফ জানালেন, প্রশাসন ব্যবস্থা করুক বা না করুক, সব বাধা উপেক্ষা করে আমরা পরীক্ষা দিতে যাবই। আর সন্তানদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে তারাও বদ্ধপরিকর বলে জানালেন অভিভাবকেরা।
কামারহাটির বাসিন্দা মৃন্ময় দাসকে আবার শিয়ালদহের কোচিং সেন্টারে নিয়ে যান মা মৌসুমি। অফিস শেষে ঘণ্টা দেড়েকের অপেক্ষায় ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শিবাশিস দাস। তাঁর কথায়, ‘গত দুবছর ধরে এভাবেই ছেলের জন্য লড়াই চালিয়ে এসেছি’। বাবার পণ, যেভাবেই হোক ধর্মঘট উপেক্ষা করে ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছবেন।
ঘরের সব কাজ সামলে দুবছর ধরে সপ্তাহে তিনদিন একমাত্র ছেলে শুভঙ্করকে সঙ্গে করে ব্যারাকপুর থেকে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং করাতে আনেন রত্না দত্ত। ছেলের কোচিং ক্লাস শেষ হওয়া অবধি ঘণ্টা তিনেক ঠায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। চোখেমুখে একটাই স্বপ্ন ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বানাবেন। সেই তিনি বলেছেন, ‘যারা ধর্মঘট ডেকেছেন, তাদের এই বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর কথা ভাবা উচিৎ ছিল। একটা সময় ছিল, মানুষের সবার্থে ধর্মঘট ডাকা হত। এখন রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মঘট ডাকে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার তাগিদে। যার খেসারত দিতে হয় আমাদের মতো মানুষদের’।