বছরের শেষ দিনে মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাপে ফেলে দিলেন বিরোধীদের। বছরের শেষ দিনে রাজ্যের কৃষকদের জন্য জোড়া উপহার তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সোমবার নবান্নে ‘কৃষক বন্ধু’ নামে নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন মমতা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে কৃষকের মৃত্যুতে আর্থিক সাহায্য দেবে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে চাষের জন্য কৃষকদের দেওয়া হবে অনুদান।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যে সমস্ত কৃষকের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, তাঁদের মৃত্যু হলে সরকারের তরফে দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণ। দেওয়া হবে ২ লক্ষ টাকা করে। যে কোনও ধরনের মৃত্যুই এই প্রকল্পের আওতায় আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মমতার বক্তব্য, কোনও কৃষকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার সমস্যায় পড়ে। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় কৃষকেরা একর প্রতি ৫ হাজার টাকা করে সাহায্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পাবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, এই টাকা দুটি ভাগে দেওয়া হবে। একবার রবিশস্যের সময়, আর একবার খরিফ শস্যের সময়। প্রতিবার আড়াই হাজার টাকা করে পাওয়া যাবে। কোনও চাষি বছরে একবারই ওই টাকা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পের আওতায় ৭২ লক্ষ কৃষক পরিবার সুবিধা পাবেন। এর জন্য রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত ৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মমতা জানিয়েছেন, আগামী কাল অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই চালু হচ্ছে এই প্রকল্প। তবে পুরো প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফর্ম তোলা যাবে। কৃষি দফতর থেকে পাওয়া যাবে এই টাকা। তিনি জানান, এর আগে তাঁর সরকার কৃষি জমিতে খাজনা মকুব করে দিয়েছেন। মিউটেশন ফি দেওয়া থেকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। সম্প্রতি অনলাইনে মিউটেশন করারও ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল সরকার। বাংলায় ৭২ লক্ষ কৃষক ও খেত মজুর এই প্রকল্পের ফলে উপকৃত হবেন বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে ঠুকে মমতা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার বলছে যে ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ হবে। কিন্তু বাংলার কৃষকদের রোজগার ইতিমধ্যেই তিনগুণ হয়ে গিয়েছে’। এ রাজ্যে কৃষকের ফসল বিমার টাকা রাজ্য সরকারই দিয়ে দেয়। কারণ, রাজ্যের চাষিরা খুশি থাকলেও তিনি খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন জানিয়েছেন।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিপুল জয়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি সবসময়ই চান বাংলাদেশ ভালো থাকুক। তাই হাসিনার জয়ের পর তিনি তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে কেন্দ্র সরকারের তিন তালাক বিল নিয়েও এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ খোলেন মমতা। তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদে ৩৩ শতাংশের বেশি মহিলা সাংসদের উপস্থিতির কথা তিনি তুলে ধরে মহিলাদের অধিকার রক্ষায় তাঁর দলের সদর্থক ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দেন মমতা। একই সঙ্গে মহিলাদের ন্যয় দিতে গিয়ে অন্য কারো প্রতি অবিচার করা উচিত নয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।