ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘বদলা নয়, বদল চাই’। সমাজের সর্বস্তরে সেই বদলই দেখল বাংলা। উন্নয়নের হাত ধরে তৃণমূল স্তরের মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াটাই মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য। কন্যাশ্রী প্রকল্প ইতিমধ্যেই বিশ্বের দরবারে সাড়া ফেলে দিয়েছে। একশো দিনের কাজে শ্রমদিবস তৈরিতে কিংবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগে গোটা দেশে নজির হয়ে উঠেছে বাংলার তৃণমূল সরকার। এমনকি কেন্দ্রের প্রশংসাও আদায় করে নিয়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর মুকুটে উঠেছে সেরার পালক।
ভূমি রাজস্ব ও জমি সংক্রান্ত খাজনা আদায়ে দেশের সেরা রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। আর্থিক কমিশনের সুপারিশ গ্রহণেও পশ্চিমবঙ্গ উপরের দিকে রয়েছে। পানীয় জল প্রাপ্তীরে ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ অগ্রগণ্য। পশ্চিমবঙ্গে ৯১ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পেয়ে থাকেন। সাক্ষরতা থেকে শিশুমৃত্যুর হারেও রাজ্য যথেষ্ট উন্নতি করেছে। একদিকে সামাজিক উন্নয়ন, অন্যদিকে কেন্দ্রের বিজেপির সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা হয়ে উঠেছেন জাতীয় নেত্রী।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল জয় থেকে শুরু করে ২০১৯ এর লক্ষ্যে ব্রিগেড চলার ডাক – নানা ঘটনার সাক্ষী চলতি ২০১৮ বছর। দেখে নেওয়া যাক এই বছরে তৃণমূলের কাজের সালতামামি
জানুয়ারি
চতুর্থ বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন
২০১৮ সালের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে প্রায় ২.২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। উৎপাদন, আইটি, সিমেন্ট, সেবা, পর্যটন, পরিকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে হবে কর্মসংস্থান।
ফেব্রুয়ারি
বাংলার পঞ্চায়েতের কাজে মুগ্ধ বিশ্বব্যাঙ্ক
চলতি বছরেই বিশ্বব্যাঙ্কের থেকে রাজ্যের কয়েক হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত এক থেকে দেড় কোটি টাকা করে আর্থিক অনুদান পেতে চলেছে৷ সেই টাকা উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারবে পঞ্চায়েতগুলি৷ এর ফলে যে প্রকল্প ২০২২ সাল পর্যন্ত চলার কথা ছিল, তা অনেক আগেই শেষ হয়ে যাবে৷
সবুজ সাথী, ই-আবগারি পেল জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পুরস্কার
অন্য সব রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রাজ্য সরকারের সবুজ সাথী প্রকল্প এবং ই-আবগারি প্রজেক্ট জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পুরস্কার ছিনিয়ে নিল বাংলা। ২৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ৯৫০টি প্রকল্পের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের এই পুরস্কার প্রাপ্তির কথা চিঠি দিয়ে নবান্নকে জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল ট্রেনিং (ডিওপিটি)। এই পুরস্কারই যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যের মুকুটে আরও একটি পালক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ছাত্র-যুব সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হয় ছাত্র-যুব সম্মেলন। উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের জেলাগুলির জন্য দুটি আলাদা সম্মেলন আয়োজিত হয়। উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে এবং দক্ষিণে হাওড়ার ডুমুরজলায় সম্মেলন করে দল।
মার্চ
দার্জিলিঙের বাণিজ্য সম্মেলনে ২,০০০ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব
দার্জিলিঙের বাণিজ্য সম্মেলনে ২,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হোটেল, দুগ্ধজাত, অ্যাকোরিয়াম, অর্কিড, টি-পর্যটন, কৃষিজ ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে এই লগ্নির প্রস্তাব আসে।
এফসিআরএ সংশোধনীর বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল
এফসিআরএ বিলের সংশোধনীর বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদরা সংসদে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্না দেন। ধর্ণার সময় সাংসদরা বিভিন্ন স্লোগান তোলেন, যেমন – ‘বিদেশী কালো টাকা পার্টি ফান্ডে নেওয়া চলবে না’ কিংবা ‘হৈ হট্টগোলে চুপিসারে সংশোধনী পাস হল কেন’ এবং ‘বিদেশের কালো টাকা = দেশের পার্টি ফান্ডে সাদা টাকা’।
এপ্রিল
জনপ্রিয়তার শিখরে ‘পাঁচটায় পঞ্চায়েত’
তৃণমূল চিরকালই ‘৩৬০ ডিগ্রি কমিউনিকেশন’ পন্থায় বিশ্বাসী। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে মিটিং মিছিল, ঘরে ঘরে প্রচার থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার – সব দিকেই সমান জোর দেয় তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারেও অন্যথা হয় নি। পঞ্চায়েতের প্রচারের মাঝে দলের নেতারা যোগ দেন এক ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে। বিপুল সংখ্যক দর্শক টেনে জনপ্রিয় হয় এই অনুষ্ঠান ‘পাঁচটায় পঞ্চায়েত’।
পথ নিরাপত্তায় বড় সাফল্য
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচীতে মিলল বিরাট সাফল্য। ২০১৮ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০১৬ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২২ শতাংশ পথ দুর্ঘটনা কমেছে এ রাজ্যে।
মে
পঞ্চায়েতে সবুজ ঝড়
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃনমূল কংগ্রেস শুধুমাত্র একক সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, পঞ্চায়েতের তিন স্তরে ৯০ শতাংশেরও বেশি আসনে জয়ী হয়।
একশো দিনের কাজে দেশের সেরা জেলারগুলির তালিকায় বাংলার ৬
একশো দিনের কাজে আবারও বাংলার জয়জয়কার। কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলার কুচবিহার সহ ৬টি জেলা সেরার তালিকায় রয়েছে।
জুন
বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠক
দলের নেতা মন্ত্রী ও কর্মীদের জনসংযোগ বাড়ানোর উপর জোর দিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
৩১টি ‘স্কচ অ্যাওয়ার্ড’ পেল বাংলা
২০১৮ সালে ইতিহাস গড়ল বাংলা। সরকারি পরিষেবা প্রদানে এই প্রথম সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্কচ পুরস্কার পেল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের কাজের এই স্বীকৃতি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে সাধারণ মানুষের কল্যাণের স্বার্থে গত ৭ বছরে উন্নয়নের যে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ রাজ্যে শুরু হয়েছে তা সারা দেশের কাছে এক নজির।
জুলাই
ধর্মতলায় শহীদ স্মরণ
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একগুচ্ছ বার্তা দেন। ২০১৯ সালে বিজেপি ফিনিশ, বলেন তিনি। এছাড়াও ভবিষ্যতের কর্মসূচির রূপরেখা বাতলে দেন তিনি।
অপচয় রুখতে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর
নবান্নে খরচ কমানো সংক্রান্ত বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আগস্ট
নাগরিকপঞ্জির বিরোধীতায় সরব তৃণমূল
গত ৩০শে জুলাই প্রকাশিত হয় আসামের ‘রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জির’ চূড়ান্ত খসড়া। সেই তালিকাতে নাম ছিল না ৪০ লক্ষ মানুষের। এই মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। সংসদের ভেতরে ও বাইরে এই ইস্যুতে সরব হয়েছে দল। এই নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্মেলন
ছোট ও মাঝারি শিল্প–সম্মেলনে মোট ১১৩ কোটি টাকার বিদেশি বরাত মিলেছে। রাজ্যের শিল্পীদের তৈরী ক্রিসমাস সজ্জা, বাঁকুড়ার টেরাকোটা, হাতে তৈরি কাপড়ের ব্যাগ, জুতো–সহ অন্যান্য হস্তশিল্পসামগ্রী যাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। দু’দিনের সম্মেলনে ৭০টি স্টলে ৯ হাজার শিল্পসামগ্রীর প্রদর্শনী করা হয়। যা বিশ্বের কাছে বাংলার হস্তশিল্প, তাঁতশিল্প ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে।
সেপ্টেম্বর
শিল্প আনতে বিদেশ পাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর
বিনিয়োগের লক্ষ্যে জার্মানি ও ইতালি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফ্রাঙ্কফুর্ট ও মিলানে সফল শিল্প সম্মেলন থেকে শুরু করে ডুসেলডর্ফে শিল্পমন্ত্রীর বৈঠক – প্রত্যেকটি জায়গাতেই বিপুল সাড়া মিলেছে। আগামী বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে প্রতিনিধিদল পাঠানোর অঙ্গীকার দুই দেশেরই। এক কথায়, বিশ্বের দরবারে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে।
অক্টোবর
রেড রোডে দুর্গাপুজো বিসর্জনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় কলকাতার রাজপথে শহরের সেরা পূজামণ্ডপগুলির বিসর্জন শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সাল থেকে। একই জায়গায় মানুষ যাতে সেরা প্রতিমা দেখার সুযোগ পান সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী এই উদ্যোগ নেন। এবার ছিল এই কার্নিভালের তৃতীয় বর্ষ। আলোর সাজে তুলে ধরা হয় রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, শিশু সাথী, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ, খাদ্যশ্রীর মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে। এছাড়াও বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হয় বাংলার সংস্কৃতি ও শিল্প ভাবনাকে।
তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক
তৃণমূল ভবনে দলের কোর কমিটির বৈঠক হয়। উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরেই এই সভা পরিচালনা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নভেম্বর
আসামে ৫ বাঙালির হত্যার প্রতিবাদে তৃণমূল
আসামের তিনসুকিয়ায় জঙ্গি হামলায় নিহত হন ৫ বাঙালি। তিনসুকিয়ার বিসনোইমুখ গ্রামে ঢুকে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এই জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তৃণমূল।
চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলা ছবির শতবর্ষ
চলচ্চিত্র উৎসব এবার ২৪ বছরে পদার্পণ করে। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের অন্যতম আকর্ষণ ছিল— বাংলা সিনেমার ১০০ বছর। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চলচ্চিত্র উৎসবে শতবর্ষের বাংলা সিনেমার জন্য ছিল আলাদা প্যাভেলিয়ন। এবার থিম কান্ট্রি ছিল অস্ট্রেলিয়া।
২০১১ সাল পর্যন্ত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কুক্ষিগত ছিল কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য। সাধারণ মানুষদের সেই অর্থে প্রবেশ অবাধ ছিল না। সাধারণের জন্য সিনেমাকে নন্দন ও রবীন্দ্র সদনের বাইরে যেতেও দেওয়া হত না। পুরো উৎসবে খুব কম সংখ্যক সিনেমা দেখানো হত। এই প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে দুটি বাংলা সিনেমা মনোনীত হয়েছে।
ডিসেম্বর
কর্মসংস্থান থেকে কৃষকদের দুর্দশা – শীতকালীন অধিবেশনে সরব তৃণমূল
বেকারদের জন্য চাকরীর দাবি থেকে শুরু করে কৃষকদের দুর্দশা, সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। এই ইস্যুতে দলের সাংসদরা সংসদ চত্ত্বরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্ণা দেন।
দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পেলেন ‘স্কচ অ্যাওয়ার্ড’
গ্রামোন্নয়ন, মাঝারি শিল্প-সহ একগুচ্ছ সরকারি পরিষেবায় অসাধারণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি ও উদ্ভাবনীর জন্যে আন্তর্জাতিক ‘স্কচ অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও গোটা দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জনসেবামূলক প্রকল্পের জন্য দেশের অন্যান্য রাজ্যকে টেক্কা দিয়ে বাংলার একাধিক সরকারি প্রকল্প এই সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জিতে নিয়েছে।