আমরা আমাদের অবাঙালি বন্ধুদের কিছুতেই বোঝাতে পারবো না কেন আমাদের কাছে মৃণাল সেনের মৃত্যু এক প্রজন্ম-মৃত্যুর নামান্তর। ওদের কাছে এটা একটা সামান্য নিউজ প্যাকেজ। কাল সকালের তিন কলম।ব্যাস। তারপর আবার কেউ হনুমানের গোত্র খুঁজবে।
আমরা কিছুতেই ওদের বোঝাতে পারবো না কেন হিন্দু বনাম মুসলমান, কামদার বনাম নামদার, রামজাদা বনাম হারামজাদা, গুজ্জর বনাম পতিদার, শিয়া বনাম শুন্নি নিয়ে যে বিভাজনটা দেশজুড়ে চলছে তা আমাদের কাছে পক্ষ নেওয়ার যথেষ্ট কারণ নয়।
বাঙালির পক্ষ নেওয়া মানে সত্যজিৎ রায় বনাম মৃণাল সেনের ছবি। বাঙালির পক্ষ নেওয়া ঋত্বিক বনাম মৃণালের সমাজবোধ। বাঙালির পক্ষ নেওয়া মানে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান, কফিহাউসের ইনফিউশন বনাম মিলনদার ক্যান্টিনের লাল চা। বাঙালির পক্ষ নেওয়া উত্তম বনাম সৌমিত্রে। জিশান বনাম আরসালানে।
দেশের সবচেয়ে ওপিনিয়নেটেড জাতির পক্ষ নেওয়ার জন্য ওই নাম গুলোই যথেষ্ট। পক্ষ নেওয়ার লোক আজ থেকে কম পরবেনা তো? তখন সত্যজিৎ মৃনাল ঘটি বাঙাল ফাইটগুলো না বদলে যায় জব্বার বনাম জয়দেবের লড়াই তে। লড়াইটা না রাম বনাম রহিমের যুদ্ধে ছড়িয়ে পরে কলকাতায়।
মৃণাল সেনদের প্রজন্ম শেষ হলো। এবার নতুন নাম খুঁজি চলুন। যাদের নিয়ে জীবদ্দশাতেই দারুণ অহংকার করবো, তাদের সবকটা ছবি, লেখা, আঁকা নিয়ে কথা বলবো, লোককে বসিয়ে শোনাবো, দেখাবো, পুরস্কৃত করবো, সারারাত বিতর্ক করে কাটাবো এ পক্ষ ও পক্ষ নিয়ে।
বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাত। মরে গেলে অমরত্ব প্রাপ্তি হয় এ দেশের দুর্ভাগা কিংবদন্তিদের। আসুন জীবদ্দশাতেই এদের নিয়ে উদবাহু নেত্ত করি। আপনার রাজ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পক্ষ নেওয়ার লোক। উত্তারাধিকার বেছে নিন।
ওরা বুঝতে পারবেনা ওসব। যেভাবে আমরা জল, সিগারেট, ভাত সব কেন খাই ওরা বোঝেনা৷ মৃণাল সেনের ভূবন সোম বোঝেনা, ঋত্বিকের যুক্তি তক্কো গল্প বোঝেনা। গোটা দেশে ধর্ম ধর্ম খেলার পরিনাম বোঝেনা, সংখ্যালঘুর জন্য সংখ্যাগুরু কেন বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে তার মানে বোঝেনা।
কাল বছর শেষের রাত। জিরো দেখেছেন, এবার সিম্বা দেখুন। ধুম মাচান প্রজন্ম-মৃত্যুর খন্ডহরে দাঁড়িয়ে।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )