‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে’। নাহ, মানা নেই; তবে হারিয়ে যেতেও লাগে টিকিট। কারণ, মন তো আর বিনা টিকিটের সওয়ারি নয়। এবার নিশ্চয়ই ভাবছেন, হারিয়ে যাওয়ার টিকিট পাবেন কোত্থেকে! চিন্তা নেই, এবার তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হারিয়ে যাওয়ার টিকিট’ নিয়ে হাজির এই প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান কবি অভীক রায়।
শনিবার সন্ধ্যায় পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে পৃথিবীর আলো দেখল অভীকের এই প্রথম সন্তান। যাতে রয়েছে মোট ৫০ টি কবিতা। প্রকাশনায় ট্রামলাইন বুকস ইন্ডিয়া। গতকাল বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন এ সময়ের আরেক বিশিষ্ট কবি ও গদ্যকার এবং অভীকের বইয়ের সম্পাদক রাজা ভট্টাচার্য। ছিলেন প্রকাশক দ্বয় সুহাঞ্জু দাস এবং দীপ কর।
এ যুগ প্রযুক্তির যুগ। তাই মাঝেমধ্যেই প্রবীণ সাহিত্যিকদের মুখে অনুযোগ শোনা যায় যে, সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁদে প’ড়ে এই প্রজন্ম নাকি সাহিত্যচর্চা করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। তবে অনেকেই যেটা জানেন না, খোদ সোশ্যাল মিডিয়ার বুকেই একদল ছেলেমেয়ে রোজ কলম হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওইসব তথাকথিত ‘ফেসবুক কবি’ বা ‘ফেবু লেখক’রাই আবারও সাহিত্যমুখী করে তুলছে নতুন প্রজন্মকে। তাঁদের লেখা পড়তেই রোজ হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করে বসে থাকে নিজেদের ফোন হাতে। অভীক সেই দলেরই একদম প্রথম সারির একজন কবি।
পাঠকদের দাবি, অভীকের কবিতা পড়েই নতুন করে ভালবাসতে শিখছেন তাঁরা। সহনশীল হতে শিখছেন ভালবাসার প্রতি। সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন, অভীকের প্রতিটি লেখাতেই নিজেদের খুঁজে পান তাঁরা। অভীকের কলম আসলে নিঃশব্দে আঁচড় কেটে দেয় তাঁদের মননে, নিজস্ব চিন্তাভাবনার জগতে। এক সাচ্চা কবির কাজই তো তাই। বই প্রকাশের মুহূর্তে যেমন খোদ রাজা ভট্টাচার্যও কবুল করলেন, ‘কেউ কেউ আসলে কবি হয়ে জন্মায়। অভীক সেরকমই একজন।’
আর অভীক কী বলছেন? ‘এখন খবর’কে কবি জানান, ”এতদিন ধরে ফেসবুকে লেখালেখির পর যে অবশেষে একজন প্রকাশক এগিয়ে এসে বইপ্রকাশের সাহস দেখিয়েছেন, সেটা বড় আনন্দদায়ক। ভাল লাগছে লেখাগুলো এবার একটা স্থায়ী ঠিকানা পেল। এতদিন শব্দের সঙ্গে আমার সফরটা শুধুই রোমাঞ্চকর ছিলো, এবার তাতে কিছুটা রোমান্টিকতা যুক্ত হল। আগামী বইমেলায় হাজার হাজার বইয়ের ভিড়ের মধ্যে ‘হারিয়ে যাওয়ার টিকিট’ নামের একটা কবিতার বইও অপেক্ষা করে থাকবে আপনাদের জন্য। এই বই কখওনই আমার একার বই নয়। এই সেই সমস্ত মানুষেরও যারা প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় অপেক্ষা করেছেন আমার লেখার। যারা ভালবেসে নানা জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছেন লেখাগুলোকে।”
এত আবেগ, এত ভালবাসা, আবার একইসঙ্গে এতটা জেদ আর দুঃসাহস আপনার কলমে? আলতো হেসে কবি বললেন, ‘ঘুমকে বানিয়েছি তাসের ঘর, স্মৃতিকে শিখিয়েছি হাওয়া/ এতটা জেদ আর দুঃসাহস, তোমাকে ভালবেসে পাওয়া।’ কে এই ‘তুমি’? তা জানতে হলে যে আপনাকেও ‘হারিয়ে যাওয়ার টিকিট’ কেটে সফরসঙ্গী হতে হবে অভীকের। হারিয়ে গিয়েও চালিয়ে যেতে হবে সেই ‘তুমি’দের খোঁজ। কারণ, ‘এই দুনিয়া আজব একটা খুঁজে পাওয়ার মিলনমেলা।’