‘জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মানুষের উন্নয়ন করে যাব। এটাই আমাদের ধর্ম।’ শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের গুলসি হাইস্কুলের মাঠের জনসভা থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে দীক্ষিত অভিষেক গতকাল বলেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। আমরা সিপিএমের মতো নাস্তিক নই। আবার বিজেপির মতো ধর্ম বিক্রি করেও রাজনীতি করি না। আমরা উন্নয়নের নিরিখে রাজনীতি করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের জন্য রাজনীতি করেন না। যদি করতেন তাহলে সবুজসাথী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প করতেন না। কারণ তাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই উপকৃত হচ্ছেন।’
আগামী ১৯ জানুয়ারি রয়েছে তৃণমূলের ব্রিগেড সভা। তারই প্রস্তুতিতে শুক্রবার একটি প্রচার সভার আয়োজন করা হয় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে। সভায় অভিষেক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ৩ মন্ত্রী মলয় ঘটক, স্বপন দেবনাথ ও অসীমা পাত্র। সভায় মানুষের ভিড় দেখে আপ্লুত অভিষেক বলেন, ‘যে সংখ্যায় মানুষ এই সভায় উপস্থিত হয়েছেন, তাতে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, অন্য কোনও জেলা লাগবে না পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলাই কলকাতার ব্রিগেড ভরিয়ে দেব।’
গতকালও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলের যুব সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন সময় ব্রিগেড চলোর ডাক দিয়েছি, যখন বিজেপি হিন্দু-মুসলমানের বিভাজন করে ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে অশান্ত করতে চাইছে। তাই সেই সাম্প্রদায়িক অসুর বিজেপিকে ভারতছাড়া করার জন্যই আমরা এই ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথর সিপিএমকে যদি বাংলা ছাড়া করতে পারি, তাহলে মাত্র ৪ বছরের শিশু বিজেপিকেও ভারতছাড়া করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লীর বুকে ধর্মনিরপেক্ষ একটি সরকার তৈরি করতে পারব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
বিজেপিকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘রামকে বিক্রি করে ও গরুর নামে রাজনীতি করে ১২০০ কোটি টাকা দিয়ে দিল্লীর বুকে পার্টি অফিস করেছে বিজেপি। তবে যে গরু ২০১৪ সালে ওদের দুধ দিয়েছিল, আগামী ২০১৯ সালে দেখবেন ওই গরুই ওদের মুখে গোবর লেপে দেবে। গরুই ওদের উঠিয়েছিল, আবার ওই গরুই ওদের ডোবাবে।’ গেরুয়া শিবিরের রথযাত্রা নিয়েও ফের করে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘দিল্লী থেকে একটা বিলাসবহুল বাস নিয়ে এসে বলছে এটা রথ। আমি তো রথ বলতে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার রথ বুঝি। অথচ এরা গাধাকে দেখিয়ে বলছে ঘোড়া। বাসকে বলছে রথ। এই হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এর জবাব দেবেন মানুষই।’
বিজেপির একনায়কতন্ত্র নিয়েও সরব অভিষেক। তিনি বলেন, ‘ভারতবর্ষে হাজার হাজার রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে একমাত্র বিজেপিই এমন দল, যার বশ্যতা কেউ স্বীকার না করলেই তার পিছনে সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে চমকে-ধমকে, চোখ রাঙিয়ে, গলা উঁচিয়ে বাড়িতে ঢুকিয়ে রাখতে পারেনি। আমরা বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি নই। মানুষের পেটে যদি লাথি পড়ে, জীবন গেলে যাবে, প্রাণ গেলে যাবে, আমরা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবেই জবাব দেব তার।’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন, তৃণমূল দলটা বিশুদ্ধ লোহার মতো। তাকে যত পোড়াবে, যত তাতাবে, যত আঘাত করবে, যত প্রহার করবে, যত জ্বালাবে, যত মারবে, এই দল ততই শক্তিশালী হবে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাকে ধারাবাহিকভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে লাঞ্চিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত-অত্যাচারিত, শোষিত করে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলা কখনও অসম্মানিত হয়নি।’ এ কথার সমর্থনে উপস্থিত জনতার হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা সভাস্থল।