তিনি নিজে নেশা করার ঘোর বিরোধী। কোনও প্রকার মাদক দ্রব্যেই যে তাঁর আসক্তি নেই, এ কথা জানিয়েওছেন তিনি। তাঁর নেশা বলতে শুধু দেশ ভ্রমণ আর নিজস্বী তোলা। হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিজস্বী-প্রীতি এখন সর্বজনবিদিত। কিন্তু এবার নিজস্বী নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন তিনি। ঘটনাচক্রে, নিজস্বী-প্রশ্ন তুললেন তাঁর দলেরই দুই সাংসদ, বিহারের ওমপ্রকাশ যাদব এবং উত্তরপ্রদেশের হরিশ দ্বিবেদী।
তাঁদের প্রশ্ন, নিজস্বী-নেশাগ্রস্তদের চিকিৎসার জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? আর কত জনই বা ওই নেশায় আক্রান্ত? নিজস্বী-নেশায় আক্রান্ত কত জন পৌঁছেছেন মনোবিদের দরজায়? শুক্রবার লোকসভায় এমনই সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হল নিজস্বী-প্রিয় মোদীর তুঘলকি সরকারকে।
তবে ওই দুই সাংসদের একটিও প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া পটেল। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুসারে, নিজস্বী-নেশা কোনও অসুখ নয়। তাই কত জন নিজস্বী-নেশাগ্রস্ত ও কত জন মনোবিদের পরামর্শ নিয়েছেন, তা নিয়ে সরকারের কাছে তথ্য নেই।’
সমীক্ষা বলছে, ২০১৫ সালে নিজস্বী তুলতে গিয়ে ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। গত মে মাসে ওড়িশায় একটি আহত ভাল্লুকের সঙ্গে নিজস্বী তুলতে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ভাল্লুকটির আচমকা আক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়। আবার, গত বছর অক্টোবরে রেললাইনে নিজস্বী তোলার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছিলেন ৩ কলেজ পড়ুয়া। দিউয়ে সমুদ্র সৈকতে নিজস্বী তুলতে গিয়েও জলে তলিয়ে গিয়েছিল ৪ তরুণ। এমন হাজারও ঘটনা। তার পরেও অবশ্য নিজস্বী তোলায় বিরাম নেই!
তবে শুধু দেশের তরুণ প্রজন্মই নয়। নিজস্বী তোলায় সমান উৎসাহী মোদীর মতো প্রবীণ নাগরিকরাও। এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ভারতে নিজস্বীকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে তাঁর অবদান মোটেই কম নয়। উল্লেখ্য ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর আঙুলে ভোটের কালি এবং দলীয় প্রতীক দেখিয়ে নিজস্বী তুলেছিলেন মোদী। যা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।
সেই শুরু। এর পর থেকে দেশে-বিদেশে যেখানেই যাঁর সঙ্গে সুযোগ পেয়েছেন নিজস্বী তুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এবং প্রতিবারই নিজস্বী তোলার সময় লক্ষ্যনীয় ভাবে ফুলে ওঠে তাঁর ৫৬ ইঞ্চির ছাতি। সেই নিজস্বী-ধারা এখনও অব্যাহত। ছুটছে প্রায় রাফালের গতিতেই! তবে খোদ বিজেপি সাংসদদের প্রশ্নের মুখে প’ড়ে মোদী এখন কী করেন সেটাই দেখার।
এমন পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। কেউ কেউ বলছেন, এটি আসলে দলীয় তরফেই মোদীর বিরুদ্ধে নিজস্বী-জিহাদ। আবার এ রাজ্যের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের খোঁচা, দিদি করেন নিজশ্রী, মোদী তোলেন নিজস্বী।