সিনেমার পর্দায় নয়, এবার বাস্তবেও রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে রোবট। শীঘ্রই যাত্রী সুরক্ষায় অত্যাধুনিক রোবট প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে চলেছে রেলমন্ত্রক।
রেলের কোচের নীচে কি রয়ে গিয়েছে কোনও ত্রুটি, যা ঘটাতে পারে বড়সড় ট্রেন দুর্ঘটনা? অথবা নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে কট্টর জঙ্গিরা কি রেলের কোচের নীচে লুকিয়ে রেখেছে শক্তিশালী বোমা, যা ফেটে গেলে প্রাণহানি ঘটবে বহু যাত্রীর? মানুষ নয়, এবার এই ধরনের যাবতীয় ত্রুটিবিচ্যুতি খতিয়ে দেখবে রোবট। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের নীচে রেললাইন ধরে এপার ওপার করে ১০০ শতাংশ নিশ্চিতভাবে জানিয়ে দেবে, সংশ্লিষ্ট ট্রেনের কোথাও কোনও গোলমাল রয়েছে কি না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা এআই) সাহায্যে কাজ করা ওই রোবটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উস্তাদ’ (আন্ডারগিয়ার সার্ভেলেন্স থ্রু আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স)। এইচডি (হাই ডেফিসিয়েন্সি) ক্যামেরা সহ ৩২০ ডিগ্রি ঘুরে ওই রোবট রেলকোচের নীচের যাবতীয় যন্ত্রপাতির পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি তুলে আনতে সক্ষম।
রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মধ্য রেলের (সেন্ট্রাল রেলওয়ে) নাগপুর ডিভিশনের মেকানিক্যাল ব্রাঞ্চ ‘উস্তাদ’ রোবটটি তৈরি করেছে। সম্প্রতি মধ্য রেলের জেনারেল ম্যানেজার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে উস্তাদের ‘ডেমো’ দেখেন। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করার পরেই উস্তাদকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রেলমন্ত্রকের ডিরেক্টর (ইনফর্মেশন অ্যান্ড পাবলিসিটি) রাজেশ ডি বাজপেয়ি বলেন, ‘যাত্রী সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে উস্তাদের জুড়ি মেলা ভার। মানুষের চোখে যে ভুলগুলি এড়িয়ে যেতে পারে, তা ১০০ শতাংশ খুঁজে বের করতে সক্ষম এই রোবট। আপাতত এর একটি মডেল তৈরি করে একটিমাত্র কোচেই পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় আরও মডেল তৈরি করে অন্যত্র এর ব্যবহার শুরু করে দেওয়া হবে।’
রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, এই রোবটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে হাই ডেফিসিয়েন্সি ক্যামেরা। ফলে রেলের কোচের নীচের যেকোনও ত্রুটিবিচ্যুতির একেবারে স্পষ্ট ছবি এবং ভিডিও তুলতে সক্ষম এই রোবট। ওই ক্যামেরাটি ৩২০ ডিগ্রি ঘুরতে পারবে। এর অর্থ, রেলওয়ে কোচের নীচের অংশের প্রতি ইঞ্চির ছবি তোলা সম্ভব হবে। থাকবে এলইডি ফ্লাড আলোর ব্যবস্থা। যা একেবারে অন্ধকারেও পরিষ্কার ছবি ও ভিডিও তুলতে সক্ষম হবে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যদি রেলের কোচের নীচে কোনও গোলমেলে শব্দ থাকে, তবে তা চিহ্নিত করে সেই শব্দের উৎস খুঁজতেও সক্ষম হবে এই রোবট।
এর পাশাপাশি, ছবি এবং ভিডিও ওয়াই-ফাই ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সার্ভারে পাঠাতে পারবে উস্তাদ রোবট। রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থার সাহায্যে যেকোনও জায়গায় বসে এই রোবটের পাঠানো ছবি এবং ভিডিও দেখতে পারবেন রেলের আধিকারিকেরা।