ক্ষমতায় এসেই রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন তিনি। বাম সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা সত্বেও রাজ্যবাসীর স্বার্থে তিনি হাতে নিয়েছেন একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প। গ্রহণ করেছেন নানা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। এমনকি স্বাস্থ্যখাতে ১২০০ কোটি বরাদ্দ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ডও তাঁর ঝুলিতে। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে চলতি মরশুমে কুইন্টাল প্রতি ১,৭৫০ টাকা সহায়কমূল্যে ৫৮ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য। পাশাপাশি, ধান বহনের খরচ হিসেবে কুইন্টাল প্রতি ২০ টাকা করেও দেবে সরকার।
সরকারি ব্যবস্থায় ধান কেনার অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এবং কৃষকরা যাতে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে এসে সরাসরি বিক্রি করতে পারেন, ফড়েদের পাল্লায় না পড়েন তার জন্য বুধবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মলয় দে, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক মন্ত্রী ও সরকারি আধিকারিকরা।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ধান বিক্রি নিয়ে চাষিদের কিছু লোক ভুল বোঝায়। তারা বলে, ক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করলে ঠিকমতো টাকা পাবে না। অতদূরে গিয়ে কী লাভ? তার চেয়ে তাদের হাতেই দিয়ে দেওয়া হোক। রাজ্য সরকার এবার থেকে সেটা করতে দেবে না। ওইসব লোকেরা চাষিদের কুইন্টাল প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম দেয়। তাতে তাঁদের ক্ষতি হয়। তাই এবার ঠিক করা হয়েছে, কৃষকরা ধান বিক্রি করতে এলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের হাতে চেক দিয়ে দেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতেও তাঁরা সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে উৎসাহ পায়।’
তিনি আরও বলেন যে, ‘আরটিজিএস পদ্ধতিতে ধান বিক্রি করলে তিনদিনের মধ্যে বিক্রয়কারীর ব্যাঙ্কে টাকা চলে যেত। তাই নিয়েও ভুল বোঝানো হত। এবার ধান বিক্রি করলে সঙ্গে সঙ্গেই চেক তুলে দেওয়া হবে। এছাড়াও ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ২ হাজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে ৩ হাজার করা হবে। কৃষকদের যাতে বাড়ি থেকে বেশি দূরে ধান বিক্রি করতে যেতে না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ তাঁর কথায়, ‘কৃষকরা আমাদের সম্পদ। তাঁরা হাসিমুখে থাকলে দেশও ভাল থাকবে।’
নবান্ন সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে সরকারের দান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪৩। সমবায় ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও অন্যদের মিলিয়ে এই সংখ্যা ৩৫০-এর ওপর। বেশিরভাগ সময় দূরত্বের কারণে কৃষকরা নিজেরা ধান বিক্রি করতে না যাওয়ায় ফড়েদের পাল্লায় পড়েন। এই কারণে মহকুমা শাসক ও বিডিওদের নিয়ে জেলাশাসকদের নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে, যাতে কৃষকদের বদলে ফড়েরা ধান বিক্রি করতে না পারেন। এই মুহূর্তে বাজারে কুইন্টালে ধানের মূল্যের তুলনায় সরকারি সহায়কমূল্য প্রায় ৩০০ টাকা বেশি। তাই কৃষকরা যদি সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে আসেন তাহলে তাঁরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জানা গেছে, স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকৃত চাষিরা যাতে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ফড়েদের আটকাতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। যেখানে প্রয়োজন, সেইসব ক্রয় কেন্দ্রে পুলিশি পাহারাও বসানো হচ্ছে। কৃষকরা যাতে কোনওভাবেই ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত না হন, প্রশাসন ও নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই কৃষকদের খাজনা মকুব করে দেওয়া হয়েছে। মিউটেশন ফিও নেওয়া হয় না এখন। রাজ্যে কৃষকদের সবরকম সহায়তা দিতে তিনি এবং তাঁর সরকার যে বদ্ধ পরিকর, তা আবারও প্রমাণ করে দিলেন বাংলার জননেত্রী।