গ্রাহকদের তথ্য যে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন স্বয়ং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। আবারও তথ্য ফাঁসের মারাত্মক অভিযোগ উঠল ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ১২.৬ কোটি মার্কিন গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ছিনিমিনি খেলার কথা ২০১৭ সালে সামনে আসার পরেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের গ্রাহকতথ্য ‘গোপন এবং সুরক্ষিত’ রাখার দাবি যে নেহাতই ‘কথার কথা’ তা জনসমক্ষে এসে গিয়েছিল। তারপর থেকে আরও একাধিক বার এই জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে গ্রাহকের সম্মতি ছাড়াই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অন্য সংস্থাকে বিক্রি করার।এবার ফেসবুকের ঝুলি থেকে সর্বশেষ বিড়ালটি সম্প্রতি বের করে এনেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
তারা জানিয়েছে গ্রাহকদের সাথে কার্যত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ফেসবুক। তদন্তে উঠে এসেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য, সমস্ত পোস্ট করা এবং না করা মিডিয়া এবং সংক্রান্ত তথ্য মাইক্রোসফট, অ্যাপল, অ্যামাজন-সহ ১৫০টিরও বেশি সংস্থাকে ‘বিক্রি’ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে নেটফ্লিক্স, ইয়ানডেক্স, স্পটিফাই-সহ একাধিক নামী সংস্থাও।
যদিও এমন ঘটনার দায় কোন রকম ভাবেই স্বীকার করেননি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বরং পরোক্ষ ভাবে তাঁরা গ্রাহকদের দিকেই আঙুল তুলেছেন। এক ব্লগপোস্টে ফেসবুক পাল্টা দাবি করেছেন, যখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগ-ইন ব্যবহার করে অ্যাপল, ইয়াহু, অ্যামাজন-সহ একাধিক ইন্টিগ্রেশন পার্টনারশিপ থাকা সংস্থার অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করেছেন গ্রাহক, তখন সেখানে কোন কোন তথ্যের অধিকার তৃতীয় সংস্থাটি পেয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে নজর রাখা উচিত ছিল গ্রাহকের। যদিও গ্রাহক-তথ্য সুরক্ষায় অ্যাপল এবং অ্যামাজন ছাড়া বাকি সব সংস্থার সঙ্গে ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস ছিন্ন করা শুরু হয়েছে ২০১৪ সালেই। যা নিয়মিত পর্যালোচনাও করা হয়।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যাই দাবি করুন না কেন, নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সার্ভারে ঢোকার চাবি তৃতীয় পক্ষের হাতে অবাধে তুলে দিয়েছলেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যেমন, রয়্যাল ব্যাঙ্ক অফ কানাডা, নেটফ্লিক্স এবং স্পটিফাই ফেসবুক ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত ‘মেসেজ’ও দেখতে পারত এবং তা তাদের ভাবমূর্তির পক্ষে ‘খারাপ’ হলে তা গ্রাহকের অনুমতি ছাড়াই ‘ডিলিট’ও করে দিতে পারত। মাইক্রোসফট-এর সার্চ ইঞ্জিন ‘বিং’ এবং রুশ সার্চ ইঞ্জিন ‘ইয়ানডেক্স’ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ‘ফ্রেন্ডলিস্টে’ থাকা ব্যক্তিদের নাম এবং তাঁদের প্রোফাইলও দেখতে পেত।
গত এপ্রিলেই জুকারবার্গ এই তথ্য ফাঁস নিয়ে মার্কিন আইনসভায় ক্ষমা চেয়ে ভুল স্বীকার করেছিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন এরকম ঘটনা আর ঘটবে না। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলেন নিজের কথা রাখতে। আর তাঁর এই গাফিলতির ফলে কয়েক কোটি মানুষ তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার বিপজ্জনক চিন্তায় ভুগছেন।