৫ রাজ্যের ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর আগামী ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের গুরুত্ব বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে প্রায় ২৫ টি দলের শীর্ষনেতাদের উপস্থিতিতে এই ব্রিগেড সমাবেশই বিরোধী জোটের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হতে যাচ্ছে। এই ব্রিগেড সমাবেশকে ঐতিহাসিক করে তুলতেই এবার রাজ্য জুড়ে জনসভা করবেন সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির ঘােলা নেতাজি সংঘের মাঠের জনসভা দিয়েই তিনি তাঁর কর্মসুচি শুরু করলেন।
সভায় অভিষেক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সভাপতি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সৌগত রায়, দীনেশ ত্রিবেদী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, ব্রাত্য বসু, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক পার্থ ভৌমিক প্রমুখ।
অভিষেকের সভা ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই সাজো সাজো রব গোটা অঞ্চলে। সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন দলের যুব সভাপতির বার্তা শোনার। এদিন সভার শুরুতেই অভিষেক বলেন, ‘আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশ আর পাঁচটা ব্রিগেডের মতো নয়। এই সমাবেশে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে উপস্থিত থাকবেন ভারতের বহু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলগুলির শীর্ষনেতারা। এই ব্রিগেড থেকেই আমরা বিজেপি ভারত ছাড়ো ডাক দেব। এই ব্রিগেডই হল বিজেপিকে ভারত ছাড়া করার সূচনা পর্ব।’
এরপরেই বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘যারা বলেছিল রথের চাকায় গুড়িয়ে দেব, মেরে দেব, কেটে দেব, সরিয়ে দেব, তাদের আজ কী করুণ পরিণতি হয়েছে, দেশের মানুষ তা চাক্ষুষ করেছে। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের পর ৫ রাজ্যেই মোদী ঝড় শেষ। কারণ বিজেপি যে ধর্মের নামে রাজনীতি করেছে, মন্দিরের নামে রাজনীতি করেছে, বিভাজনের নামে রাজনীতি করেছে, তা বুঝেছেন ওই ৫ রাজ্যের মানুষ। তাই তাঁরা সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে ভোট দেননি।’
সিপিএমের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘আগে সিপিএম বলত, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, আমরা খাব তোমরা বাদ। আর এখন এরা বলে, জয় শ্রীরাম মানুষের মাথার নাই কোনও দাম। জয় শ্রীরাম দাঙ্গা করাই একমাত্র কাম। জয় শ্রীরাম বাড়িতে সিলিন্ডারের এক হাজার টাকা দাম। জয় শ্রীরাম ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়াই আমাদের কাম।’
এরপরই তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘ক্ষমতা থাকলে বিজেপি গণতান্ত্রিকভাবে লড়ুক। যারা বিভিন্ন দলের আবর্জনাদের নিয়ে দল তৈরি করেছে, তারা নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলা করতে এসেছে! কত ধানে কত চাল তা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা মাঠে ঘাটে প্রমাণ করে দেবে।’
এখানেই না থেমে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপি গরুর নামে ভোট চায়। যে গরু ২০১৪ সালে দুধ দিয়েছিল, এখন সে-ই গোবর দিয়ে মুখে কালি মাখিয়ে দিয়েছে।’ এমন মন্তব্যের পর কর্মী-সমর্থকদের হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা স্থল। এরপরই বিজেপিকে একহাত নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষ বিপিএল তালিকায় রয়েছে। আজ তাদের দিকে না তাকিয়ে ১০০০ কোটি টাকায় মূর্তি গড়ছে বিজেপি। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনিও লজ্জিত হতেন। বিজেপি খালি হিন্দু হিন্দু করে। কিন্তু আজ ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি যেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বেশি, সেখানের মানুষও আজ বুঝতে পেরেছেন বিজেপিকে ভোট দেওয়া আর খাল কেটে কুমীর আনা একই ব্যাপার। তাই এদের থেকে হাত ও মুখ সরিয়ে নিয়েছে।’
এরপরই জেলার কর্মীদের উদ্দেশ্যে যুব সভাপতির বার্তা, ‘আগামী ৪-৫ মাস আমাদের মাঠ ছেড়ে বুথ ছেড়ে যাওয়া চলবে না। এ লড়াই স্বাধীনতা সংগ্রামের মতোই। রক্ত ঝরলেও মাঠ ছাড়া চলবে না। যার যা কাজ তাকে তা করতে হবে। যে রাজ্যে কাজ করছে সে রাজ্যে কাজ করবে। যে জেলায় কাজ করছে সে জেলায় করবে। যে অঞ্চলে করছে সে অঞ্চলে করবে। যে বুথে করছে সে বুথে করবে।’
জেলার মানুষদের নিয়েও আশাবাদী অভিষেক। তাঁর দাবি, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশই হোক বা ব্রিগেড, এই জেলা থেকেই লক্ষাধিক মানুষ যোগ দেন সমস্ত দলীয় সমাবেশে। আমার ধারণা এই উত্তর ২৪ পরগণা থেকেই প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সমাগম আসন্ন ব্রিগেডে। এই জেলার মানুষই ব্রিগেড ভরিয়ে দেবেন।
অভিষেকের সভার জন্য গত দু’দিন ধরেই জেলার সব বিধানসভা এলাকায় অটো, টোটো নিয়ে প্রচার করেছিলেন জেলা নেতৃত্ব। জেলা, মহকুমা স্তরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে একাধিক বৈঠকও করা হয়েছিল। যার জেরে শনিবার সকাল দিয়েই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস, প্রাইভেট গাড়ি করে লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থক জনসভায় হাজির হতে থাকেন। সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতির বার্তা শোনার জন্য উপচে পড়ে মানুষের ভিড়।