‘২০১৯ বিজেপি ফিনিশ’। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ যে একেবারেই নির্ভুল, সে ইঙ্গিতই করছে ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল। বলা যায়, সেমিফাইনালে বিজেপির এমন ভরাডুবির ফলে এবার ‘আচ্ছে দিন’ শুরু হল বিরোধীদেরই।
৫ রাজ্যের নির্বাচনে তিনটি রাজ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কংগ্রেস। আর এই জয় মহাজোটের চিত্রটিকে বদলে দিয়েছে। সর্বাগ্রে সেই ইঙ্গিত মিলেছে গতকাল মায়াবতীর নাটকীয় মনোভাব বদলের মাধ্যমে। বুধবার সকালেই মায়াবতী বিদ্রোহের পথ থেকে সরে ঘোষণা করেছেন রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে তাঁর দল কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন করবে। বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তিনি কংগ্রেসকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছেন বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘোষণা থেকেই স্পষ্ট যে লোকসভা ভোটেও মায়াবতী উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব ও কংগ্রেস এবং অন্যান্যদের সঙ্গে বিজেপি বিরোধী জোটে থাকছেন। প্রত্যাশিতভাবেই হিন্দি বলয়ের প্রধান তিন রাজ্যের ভোট সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ। সুতরাং ওই রাজ্যেও বিজেপির সঙ্গে টক্কর দেবে জোট।
আবার তেলেঙ্গানার ফলপ্রকাশের আগেই বিজেপি কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কাছে গিয়ে বলে এসেছে তারা তাঁকেই সমর্থন করবে। কিন্তু ওই রাজ্যে কে সি আর এত বিপুল ভোটে জিতেছেন যে তাঁর আর বিজেপির সমর্থনের প্রয়োজনই নেই। আগামীদিনে মহাজোটের ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রত্যক্ষ করে তিনিও যে বিজেপির থেকে দূরত্ব বাড়াবেন তা বলাই বাহুল্য।
অন্যদিকে, ওড়িশায় ভোট রয়েছে আগামী বছর। সুতরাং বিজেপি ঠেকাতে সেই ভোটে বিজু জনতা দলের নবীন পট্টনায়েক ক্রমেই বিজেপি বিরোধিতা বাড়াবেন, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। তবে এই দলগুলিকে বিজেপি পাশে পাবে বলেই আশা করেছিল। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে দিচ্ছেন একে একে সকলেই।
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে গতকাল যে ফলাফল হয়েছে তার নিরিখে নিজেদের হাতে থাকা ৬২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩১টি আসনেই পরাজিত হয়েছে বিজেপি। ছত্তিশগড়ে ১১টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১০টিতে কংগ্রেস এগিয়ে গিয়েছে বিধানসভা ভোটের নিরিখে।
প্রসঙ্গত, বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মধ্যমণি করেই তৃণমূল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি এবং ডিএমকে ইতিমধ্যেই বিজেপি বিরোধী মহাজোটে যোগ দিয়েছে। এর বাইরে আছে আরও ১৯টি দল। বিরোধীরা মনে করছে, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই প্রবল হবে আরও দুটি দলের এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা। এক রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি এবং অন্যটি মহারাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া।
ওই দুই দল যদি এনডিএ ত্যাগ করে তাহলে বিজেপি আরও কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাবে। কারণ ওই দুই দল বিগত ২০ বছর ধরে যখন যে জোট ক্ষমতায় আসে, সেই দলেরই শরিক হয়। এই দুটি দল আগাম বুঝতে পারে কারা আসছে ক্ষমতায়। তার ভিত্তিতেই ঘরবদল করে।
এমনিতেই ৫ রাজ্যেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ার ফলে রাতারাতি বদলে গেল দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র। গোবলয়ের একটা বড় অংশের গেরুয়া রঙ মুছে হয়ে গেল সবুজ। এর ফলে বিরোধীদের মধ্যেও এই আত্মবিশ্বাস ফিরে এল যে, মোদী-শাহর বিজয়রথের ঘোড়াও থামানো সম্ভব। সবকটি বিরোধী দল একসঙ্গে রুখে দাঁড়ালে সফল হবে না মোদী ম্যাজিকও, এ বিষয়েও নিশ্চিন্ত হতে পারলো তারা।
শুধু তাই নয়, এখনকার পরিস্থিতিতে এবং এই সমীকরণে ভোট হলে দিল্লীর মসনদ থেকে যে সহজেই উপড়ে ফেলা যাবে পদ্মকে, তা নিয়ে এখন আরও আত্মবিশ্বাসী বিরোধী শিবির।