এবার শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের সেচের সমস্যা মেটাতে বিশেষ উদ্যোগ নিল রাজ্য। আগে নানাভাবে অবস্থার সামাল দেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা এই প্রথম। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সেচসেবিত এলাকা বৃদ্ধির জন্য এবার ১৫ কোটি ৯৫ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করল রাজ্যের সেচ ও জলপথ বিভাগ। এই অর্থের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণে খরচ হবে ৬ কোটি ৯ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। সেচসেবিত এলাকা বাড়ানোর জন্য ব্যয় হবে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা। বাকি ৫ কোটি ৩৮ লক্ষ ৪০ হাজা টাকা খরচ হবে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহসভাধিপিত দেবু টুডু বলেন, ‘২০১৮-১৯ আর্থিকবর্ষে আমাদের জেলার সব থেকে বড় প্রকল্প এটি। এই কাজটি শেষ হলে আর সেচের জন্য কৃষকদের হাহাকার করতে হবে না।’ বন্যার কবলে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে পড়ে মঙ্গলকোট-কেতুগ্রাম। বন্যা নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলকোটের অজয় নদের দুটি জায়গায় কাজ হবে। একটি কাজে খরচ হবে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। আর একটি প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজ হবে দামোদর বাঁ দিক লাগোয়া জামালপুরের হাটগােবিন্দপুর (খরচ হবে ২ কোটি ৭ লক্ষ টাকা) ও খণ্ডঘােষের কুমিরকোল হাইস্কুলের পাশে।
পরিকাঠামাে উন্নয়নের আর একটি বড় বিষয় হল কর্মতীর্থ নির্মাণ। বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কর্মতীর্থ তৈরি হচ্ছে কাটোয়ার দুটি ব্লকে। কাটোয়া ১নং ব্লকের কৈথনে ও কাটোয়া ২ নং ব্লকের সিঙ্গি এলাকায় কর্মতীর্থদুটি তৈরিতে খরচ পড়বে প্রায় ৪ কোটি টাকা করে। এ প্রসঙ্গে কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার উন্নয়নের জন্য একের পর এক যে সব প্রকল্প চালু করছেন, তা দেশের ক্ষেত্রে নজির। কর্মতীর্থ এমনই এক প্রকল্প, যেখানে এক ছাতার নীচে অনেক বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। যেভাবে একের পর এক প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছেন, তাতে আর কর্মসংস্থানের জন্য কাউকেই বাংলার বাইরে যেতে হবে না।’
সেচসেবিত এলাকা বাড়ানাের সব থেকে বড় কাজ হবে মেমারি ১নং ব্লকের গাঙুরের খাল লাগােয়া প্রায় ১৮ কিমি এলাকাজুড়ে। ৪ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই কাজটি হলে প্রায় হাজার দশেক কৃষক উপকৃত হবেন। এছাড়া পরিকাঠামাে উন্নয়ন খাতে কালনা ২ নং ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের ফড়িংগাছি খালের ওপর একটি সেতু তৈরি হবে ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। এছাড়া রায়না ২নং ব্লকের বর্ধমান-আরামবাগ রােড লাগােয়া ডিভিসির ক্যানেলের ওপর ৫৩ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি ব্রিজ তৈরি হবে। এর পাশাপাশি, জামালপুরে কানা নদীর ওপর একটি ব্রিজ তৈরি হবে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে।
অন্যদিকে, কেতুগ্রাম ২নং ব্লক থেকে শুরু করে কাটোয়া ২নং ব্লক হয়ে পূর্বস্থলী ২নং ব্লক লাগােয়া ভাগীরথীর ভাঙন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ভাঙন রুখতে স্থানীয়ভাবে নানা কাজ হয়েছে। তাতে তেমন সুরাহা না হওয়ায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে স্থায়ী সমাধানের। তার জন্য গড়া হয়েছে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। কমিটি ইতিমধ্যেই ভাগীরথীর ধার বরাবর মালদা-মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান-নদিয়া জেলার যে এলাকাগুলি পড়েছে, তার একটা বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। রিপাের্ট পাওয়ার পর ভাঙন মােকাবিলায় কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।