বিজেপি সরকার ভীষণভাবে গো-ভক্ত। তাই রাজস্থানে ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে ১৯৯৫ সালের ‘গো জাতীয় পশু রক্ষা আইন’কে খুব কড়া ভাবে প্রণয়ন করেছেন। আর এই ‘গো-রাজনীতি’র ফাঁসে আটকে গিয়ে কার্যত নাভিশ্বাস ওঠার দশা সেখানকার কৃষকদের। গোমাতাদের অত্যাচারে রীতিমত অতিষ্ঠ তাঁরা। ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানাচ্ছেন সকলে।
তাঁরা জানিয়েছেন, এতদিন সম্বর নীল গাই এবং হরিণের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে গিয়েই হিমশিম খেতেন তাঁরা আর এখন তার সঙ্গে উপরি পাওনা হিসাবে যুক্ত হয়েছে ‘গো–দাপট’। এই ঝঞ্ঝাটের জন্য রাজ্য সরকারের গরুপ্রেমকেই দায়ী করছেন চাষিরা।
অথচ কৃষকেরা এই অত্যাচার থেকে ফসল বাঁচাতে কিছুই করতে পারছেন না। কারণ ‘গো- সংরক্ষণ’ আইন এখন ভীষণ কড়া। বর্তমান আইন অনুযায়ী, গরু জাতীয় (বোভাইন) কোনও পশু উপযুক্ত অনুমতি ছাড়া পরিবহণ এবং রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া অপরাধ। শুধু তাই নয়, ওই পশুদের আঘাত করাও অপরাধ। দোষী প্রমাণিত হলে দশ বছর পর্যন্ত কারাবাস। তার ফলে শুধু জমির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে রাখা ছাড়া অসহায় চাষিদের কোনও কিছুই করার নেই।
সূত্রের খবর, সারা রাজ্যে এমন অবাধে বিচরণকারী গরুর সংখ্যা প্রায় কয়েক হাজার। আজমল খান নামে অাজমেঢ়ের এক পশুপালক বলেন, ‘যে কোনও গরু একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুধ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন পশুপালকরা সাধারণত সেই গরুকে বাইরে বিক্রি করে দিতেন। পরিবর্তে অন্য গরু কিনতেন যে দুধ দিতে সক্ষম। ওই আইনের জন্য এখন গরু বিক্রি করা যাচ্ছে না। তার উপর রয়েছে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব।’ আলওয়ারে গোরক্ষকদের হাতে পর পর সংখ্যালঘু পশুপালকদের খুন হওয়ার পর থেকে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। কেউ এখন আর গরু বিক্রি করার চেষ্টাই করছেন না। অন্য দিকে উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা গরুকে বাড়িতে রেখে খাওয়াতেও পারছেন না। তাই ছেড়ে দিচ্ছেন। সেই সমস্ত গরুই নিজেদের মতো করে চরে খাচ্ছে, নষ্ট করছে চাষির ফসল।
সমস্যার সমাধানে বিকানের জেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে গো-রক্ষা এবং পালন কেন্দ্র তৈরি করার কথা বলেছিলেন বসুন্ধরা। ওই কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার এ ধরনের মালিকানাহীন গরুকে আশ্রয় দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা শুধু ‘আচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতির মতই হয়ে আছে। তার বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে এই মুহূর্তে ‘গো মাতা’-দের দাপটে ফসল সামলাতে দিশেহারা সে রাজ্যের কিষানরা!
ভোটের এই আবহে কৃষকদের এই অভিযোগ রীতিমত রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপির। কৃষক অসন্তোষ যে ভোট ব্যাঙ্কে বেশ ভালো প্রভাব ফেলবে তা বুঝতে বাকি নেই ‘গো- রাজনীতিকদের।যে গোমাতার আশীর্বাদেই নাকি তারা সব ঝড়ঝঞ্ঝা উৎরে যান তাদের অত্যাচারই যে এমন ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে তা মনে হয় নেতারা বোঝেননি।