সময়ের সাথে পরিবর্তন এসেছে রান্না করার পদ্ধতি বা রান্নার সরঞ্জামেও। ষ্টীলের বাসনের জায়গা নিয়েছে উন্নতমানের ফাইবার বা ননস্টিকের বাসন। গ্যাসের জায়গা নিয়েছে মাইক্রোওভেন বা ইন্ডাকশন ওভেন। যেখানে বর্তমানে একটু বয়স হলেই কাবু হয়ে জান অনেকেই, সেখানে বয়সকে হার মানিয়ে, যাবতীয় আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম থেকে দূরে সরে খাঁটি দেশীয় উপায়ে নানা লোভনীয় পদ রাঁধতেন তিনি। তাঁর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও ছিল। সোমবার মারা গেলেন এই ইউটিউব শেফ কারে মস্তানাম্মা। গত ৬ মাস ধরে বেশ অসুস্থ ছিলেন তিনি। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৭ বছর।
বাংলা প্রবাদে আছে ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’। তিনি যেন এই প্রবাদটিকে সত্যি করে দেখিয়েছিলেন। বয়সের কোঠা ১০০ পেরিয়ে গেলেও তাকে তুড়ি মেরে জীবনকে উপভোগ করে গেছেন তিনি। রীতিমত দাপট দেখিয়েছেন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে। তাঁর চ্যানেল ‘কান্ট্রি ফুডস’-এর সাবস্ক্রাইবার ছিল প্রায় ১২.৮ লক্ষ।
ক্যামেরার সামনে যে রকম সপ্রতিভ এবং হাসিখুশি দেখাত এই জনপ্রিয় মহিলা পাচককে, ততটা উজ্জ্বল ছিল না তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মাত্র ২২ বছর বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিলেন। পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছিল কলেরায়। পেটের দায়ে খেত-খামারে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। সেভাবেই দিন কাটছিল। রান্নাবাটিতে মস্তানাম্মা-র গুণের কদর গ্রামবাসীরা এমনিতেই করতেন। তাকেই হাতিয়ার করে ‘আম্মা’-র নাতি লক্ষ্মণ গ্রামের উপকণ্ঠে গড়ে তোলেন একটি রেঁস্তোরা। সেইখানে আম্মার হাতে তৈরি জিভে জল আনা সব খাবারদাবারের প্রশংসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রেঁস্তোরার ব্যবসা কাজে দেয়। কিন্তু এখান থেকেই লক্ষ্মণের মাথায় আসে নতুন ‘আইডিয়া’। ঠাকুমার জন্য ইউটিউবে একখানা চ্যানেল বানিয়ে ফেলেন তিনি। আর তার পর রান্নার ‘লাইভ’ রেকর্ডিং করে সেই সব ভিডিও আপলোড করেন তিনি। ‘সুপারহিট’ হয়ে যান মস্তানাম্মা। ইউটিউবের গ্রাহকদের মধ্যে আম্মার রান্না করা উপাদেয় সব পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল ‘তরমুজ চিকেন’, ‘এমু এগ কারি’, ‘তেলেগু স্টাইল ব্রিঞ্জল কারি’, ‘ব্যাম্বু বিরিয়ানি’ প্রভৃতি।
তিনি রান্না করতেন ঝাঁ-চকচকে রান্নাঘরে নয়, খোলা মাঠে, সাধারণ স্টিলের থালা-বাটি-কড়াইয়ে। গ্যাস বা স্টোভে নয়, কাঠকয়লা পুড়িয়ে। চামচে মেপে নয়, হাতের আন্দাজে। নিজেই কুটনো কুটতেন, নিজেই রাঁধতেন। কখনও সখনও প্রথমটার ব্যতিক্রম ঘটলেও দ্বিতীয়টার কোনওদিন ঘটেনি। ফোকলা মুখে একগাল হেসে, পরম যত্ন, আর মনোযোগ দিয়ে ‘আম্মা’ যখন রান্না করতেন, ক্যামেরায় তা রেকর্ড করতেন তাঁরই নাতি লক্ষ্মণ। সেই ভিডিওই পরে ‘আপলোড’ করা হত ‘কান্ট্রি ফুডস’ চ্যানেলে। অগুনতি দর্শক তা দেখতেন এবং পছন্দও করতেন। বিশেষত গত দু’বছরে দ্বিগুণ হারে বেড়ে গিয়েছিল মস্তানাম্মা-র চ্যানেলের গ্রাহক সংখ্যা। মস্তানাম্মার মৃত্যুর খবরে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে নেটিজেনদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই শোকবার্তা জানিয়েছেন তাঁকে স্মরণ করে।