নিজের উদ্ভাবনী শক্তির দ্বারা অভিনব প্রযুক্তির সাহায্যে দেশে কার্যত কৃষি-বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি। ২০১০-এ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারত সফরে এলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যে গুটিকয়েক ‘প্রগতিশীল কৃষক’কে বেছে নেওয়া হয়েছিল কৃষিমন্ত্রকের তরফে, সঞ্জয় শাঠে তাঁদেরই একজন। এবার আবারও শিরোনামে মহারাষ্ট্রের নাসিকের সেই চাষি। তাঁর অভিযোগ, ২০১৮-য় তিনি কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন মাত্র ১ টাকা ৪০ পয়সায়! সব মিলিয়ে চার মাস হাড়ভাঙা খাটুনির পর তাঁর মোট উপার্জন ১,০৬৪ টাকা!
জানা গেছে, এ বছর প্রায় ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ উৎপাদন করেছিলেন সঞ্জয়। তবে তা বিক্রি করতে গিয়ে মূল্য পেয়েছিলেন কেজি প্রতি মাত্র ১ টাকা। পরে রফা হয় ১ টাকা ৪০ পয়সায়। অর্থাৎ ওই বিপুল পরিমান পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় মাত্র ১০৬৪ টাকা। এরপর আর সময় নেননি তিনি। মহারাষ্ট্রে চাষিরা কেমনভাবে বেঁচে আছেন, তা বোঝাতে পুরো টাকাই তিনি পাঠিয়ে দেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। মানি অর্ডারে ঠিকানা লিখে দেন, ‘নরেন্দ্র মোদী, প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া।’
ক্ষুব্ধ সঞ্জয় বলেন, ‘টানা চার মাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পেঁয়াজ উৎপাদন করার নাকি এই ফল! ফলন ভাল হচ্ছে অথচ দাম পাচ্ছি না। আমরা কী পরিশ্রম করিনা? এই সামান্য টাকা দিয়ে কি করব? তাই প্রধানমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে পুরো টাকাটাই মানি অর্ডার করে দিয়েছি। যার জন্য আমার আরও ৫৪ টাকা খরচ হয়েছে।’
জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর নিফাদ পোস্ট অফিস থেকে ওই মানি অর্ডার করা হয়। ঠিকানা ছিল, ‘নরেন্দ্র মোদি, প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া।’ এ প্রসঙ্গে সঞ্জয় বলেন, ‘আমি কোনও রাজনৈতিক দল করি না। কিন্তু কৃষকদের দুর্দশা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা ও বিরূপ মনোভাবে আমি হতাশ, ক্ষুব্ধ, ব্যথিত।’
প্রসঙ্গত, দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ পেঁয়াজের উৎপাদন হয় মহারাষ্ট্রের নাসিকে। কিন্তু প্রায় ফি বছরই দাম না পেয়ে হতাশ হতে হয় চাষিদের। মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। অথচ সরকার সে সব নিয়ে এখনও উদাসীন। এ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভও কম হয়নি। বস্তুত, ‘আচ্ছে দিন’-এ মহারাষ্ট্রের চাষিদের ভয়ঙ্কর দুর্দশার ছবিই আরও একবার সামনে নিয়ে এলেন এবং প্রতিবাদ করলেন সঞ্জয়। ভোটের মুখে যা মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, আজ থেকে ২০ বছর আগে দিল্লির বিজেপি সরকারের পতনের মূলে ছিল ঝাঁঝালো পেঁয়াজই। ১৯৯৮-র গোড়ার দিকে যে পেঁয়াজের দাম ছিল ১০-১২ টাকা প্রতি কেজি, তাই বেড়ে হয ৬০-৮০ টাকা কেজি প্রতি। পেঁয়াজের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করেও জনরোষ ঠেকাতে পারেনি তৎকালীন মদনলাল খুরানা সরকার। আবার ১৯৮০-এ কেন্দ্রে চরণ সিংয়ের সরকার পড়েছিল পেঁয়াজের ঊর্ধ্বগামী দামে। এবার পেঁয়াজের ঝাঁঝ মোদীকেও কাঁদিয়ে ছাড়ে কিনা, সেটাই এখন দেখার।