খোলাবাজারের তুলনায় রাজ্য সরকারের কাছে ধান বিক্রি করলে মিলছে প্রতি কুইন্টালে প্রায় তিনশো টাকা বেশি। তাই খোদ সরকারের কাছেই নিজের নিজের জমির ধান বিক্রি করার জন্য চাষিদের আগ্রহ এখন চোখে পড়ার মতো।
গত খরিফ মরশুমে এই সময় পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে মাত্র ২৭ হাজার টন ধান কেনা হয়েছিল। এবার এক মাসেই সেই পরিমাণ পৌঁছেছে ২ লক্ষ ১৪ টনে। তাই স্বাভাবিকভাবে চাষিরা বেশি ধান বিক্রি করতে সরকারের কাছেই যাচ্ছেন। এই প্রবণতা আগামী দিনে আরও বাড়বে, এটা বুঝতে পেরে সরকার আগাম উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে।
সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা এবার ধার্য করা হয়েছিল ৫২ লক্ষ টন। এই পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য নবান্নে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন। যে চাষিরা আসবেন, তাঁদের সবার কাছ থেকে ধান কেনা হবে। ধান থেকে উৎপাদিত চাল মজুত করার জন্য আরও গুদাম ভাড়া নিচ্ছে দফতর। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এফসিআই যাতে আরও বেশি পরিমাণ চাল এ রাজ্য থেকে নেয়, সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
গত খরিফ মরশুমে মোটা ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল প্রতি কুইন্টালে ১৫৫০ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার এবার একধাক্কায় তা দু’শো টাকা বাড়িয়ে ১৭৫০ টাকা করেছে। সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করলে আরও ২০ টাকা করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সেখানে এখন খোলাবাজারে মোটা ধান ১৪৫০ টাকা কুইন্টাল দরের আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। দামের এই ফারাকের জন্য সরকারের কাছে ধান বিক্রি বেশি হচ্ছে।
কিন্তু এর সুযোগ নেওয়ার জন্য একশ্রেণীর ‘ফড়ে’ বিভিন্ন জেলায় নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে নিয়ে তা সরকারি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে তারা। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, প্রকৃত চাষিরা যাতে ধান বিক্রি করেন, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড সহ বিভিন্ন নথি দেখে চাষিদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘ভুয়ো’ চাষিদের নামে ধান বিক্রি আটকানোর জন্য এবার ‘ভারচুয়াল অ্যাকাউন্ট’ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা যাতে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেন, তার জন্য একজনের কাছ থেকে কেনার সর্বোচ্চ সীমা ৯০ কুইন্টালে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।