‘বাংলা দিল্লীকে সামলায়। দিল্লী বাংলাকে সামলায় না। এখন বাংলাই দেশকে পথ দেখাচ্ছে’। কালনার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের সরকারি পরিষেবা প্রদান সভায় এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দেন উন্নয়নের বাংলা আর দিল্লীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না। বরং বাংলাই দেশকে চালনা করবে, পথ দেখাবে।
প্রসঙ্গত, এই নিয়ে গত সাত বছরে মোট ৪৩০টি কাজকর্মের পর্যালোচনা ও পরিষেবা প্রদান সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন বাংলা দেশের পথিকৃৎ? একগুচ্ছ উদাহরণ, তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘২০১২ সালে আমরা দেশের মধ্যে প্রথম মাটি উৎসব করেছি বর্ধমানে। মাটিতীর্থ গড়েছি। পরের বছর রাষ্ট্রপুঞ্জ এই উৎসব করে’। কন্যাশ্রীর প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কন্যাশ্রী বিশ্বজয়ী প্রকল্প। বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে’। সেই সঙ্গে জানান, ‘জেলায়, মহকুমায় ঘুরে ঘুরে সরকারি পরিষেবা দান ও কাজের পর্যালোচনার এরকম ধারাবাহিক প্রশাসনিক সভা কোনও রাজ্য সরকার করে না’।
এরপর দিল্লীর সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নোটবন্দি, জিএসটি-র পর অন্য সব রাজ্যে যখন বেকারত্ব বাড়ছে, আমরা সেখানে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছি। রাজ্যে ৩০০ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে। তাও গড়ে হাজার দশেক আসন পড়ে থাকছে। আমরা প্লেসমেন্টের সুযোগ করে দিচ্ছি। সংখ্যাটা বছরে প্রায় ৬ লাখ। এই সংখ্যাটাকে আমরা ১২ লাখে নিয়ে যাব’। ১০০ দিনের কাজে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রথম হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের খাজনা মকুব করেছি। মিউটেশন ফি তুলে দিয়েছি। সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে সব পেশার মানুষের জন্য পেনশন-অনুদানের বন্দোবস্ত করেছি।’
বিরোধীদের উদ্দেশ্যেও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আগে তো স্কুলগুলো রাজনীতির আখড়া ছিল। হাসপাতাল শ্মশান হতে বসেছিল। রাঘব বোয়ালের দল রাক্ষুসে মাওবাদীদের নাম করে সিঙ্গুরে-নেতাইয়ে অশান্তি পাকাচ্ছিল। আমরাই একমাত্র প্রতিশ্রুতি রেখেছি। কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছি। জমিকে চাষযোগ্য করে ঠিকঠাক চাষবাস করার জন্য এখনও অনুদান দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্যের ৩০ লাখ কৃষককে ১২০০ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য করেছি’। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কারও চাকরি খাব না। কিন্তু মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা শিকেয় তুলে কারণে-অকারণে আন্দোলনও বরদাস্ত করা হবে না।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘সবসময় দাও দাও। চাইলেই হবে না। আসবে কোথা থেকে ভাবতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ার, পার্শ্বশিক্ষক, আশাকর্মী, আইসিডিএস কর্মী সকলেরই মাইনে বাড়িয়েছি।
বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া-সহ দক্ষিণবঙ্গে সেচের সঙ্কট মেটাতে নিম্ন দামোদর এলাকায় ২৭৬৮ কোটি টাকা খরচ করে একটি বেসিন প্রোজেক্ট হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সভা মঞ্চ থেকে ১৯৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচে পূর্ব বর্ধমানের মোট ৩৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২৪০ কোটি ব্যয়ের ৯৮টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মমতা। ২৬ হাজার ২৪০ জন উপভোক্তার হাতে বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন।