রাজ্যের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সদাই তৎপর থাকেন তিনি। ভিনরাজ্যের মাওবাদীরা যাতে ঘাঁটি গাড়তে না পারে, তাই জঙ্গলমহলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করতে বিশেষ উদ্যোগ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সীমান্ত এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার-সহ সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিলেন তিনি৷ একইসঙ্গে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল এলাকার ১৮০ বর্গকিলোমিটার ঝাড়খন্ডের সীমানা৷ ঝাড়খন্ড থেকে এসে এ রাজ্যে যাতে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে পুলিশকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেখানে প্রশাসনিক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য রাখবেন যাঁর নামে রেশনকার্ড, সেটা যেন তাঁর কাছেই থাকে৷ বাংলার আবাস যোজনা, বিভিন্ন ভাতা, খাদ্যসাথী প্রকল্প, এইসব বিষয়ে কোনও রকম অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড়া হবে না৷ প্রাপ্য থেকে যেন গরিব কোনও ভাবেই বঞ্চিত না হয়’৷
গতকালের প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুই মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সন্ধ্যারানি টুডু্, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মৃগাঙ্ক মাহাতো , জেলাপরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় সহ রাজ্য এবং জেলার প্রশাসনিক কর্তারা।
জেলার নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও নজর দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাকৃতিক কারণেই এবার জেলায় ধানের ফলন কম হবে। তাই সে কথা মাথায় রেখেই জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায়ের কাছে তিনি জানতে চান, এ বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা কী নেওয়া হয়েছে? বিকল্প চাষ করার পাশাপাশি যাতে বেশি সংখ্যায় মানুষকে ১০০ দিনের কাজে লাগানো যায়, সেই পরামর্শও দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
একইসঙ্গে স্বনির্ভর দলগুলিকে যাতে বেশি করে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়েও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তিনি৷ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে মুরগি-হাঁস সহ নানা প্রকল্পে সহায়তা করার জন্য জেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কর্তাদের নানা পরামর্শও দেন৷ পুরুলিয়ার ছররার অ্যারোড্রাম এখন কী পরিস্থিতিতে আছে, দ্রুত যাতে সেটি চালু করা যায়, সেইজন্য আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি৷ ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে কতটা কাজ হয়েছে, সে বিষয়েও বিস্তারিত খোঁজ নেন৷
জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে৷ কারণ পর্যাপ্ত ব্যাঙ্ক নেই৷ এখনও গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় ব্যাঙ্ক নেই৷ এ কথা কানে যেতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ককে বিষয়টি দেখতে। এবং এ বিষয়টি তদারকির জন্য দায়িত্ব দেন জেলাশাসককে৷
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে জাহেরথান, কবরস্থান তৈরির পাশাপাশি যাতে আরও অনেক কাজ করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আদিবাসী বীরহোড়, শবরদের বাংলার আবাস যোজনায় সাহায্য করতে হবে। যাঁদের ঘরবাড়ি নেই তাঁদের জন্য সেই ব্যবস্থা যাতে সহজে করা যায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
একইসঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় কেউ কেউ অসহযোগিতা করছেন। টাকা তোলার অভিযোগ আসছে। আমি কিন্তু এইসব মানবো না। যাঁদের টাকা তোলার মানসিকতা আছে তারা আমার সঙ্গে বা দলের সঙ্গে থাকবেন না। কাজ না করলে থাকতে হবেনা। উন্নয়নের প্রশ্নে আমি কোনও শিথিলতা মানব না।’