চাষীরা প্রায় সব লেনদেনই করে নগদে। সে প্রান্তিক চাষী হোক কিমবা বড় চাষী। বীজ কেনা থেকে শস্য বিক্রি কিমবা ক্ষেতমজুরের মজুরীও দেয় নগদেই। চিত্রটা ভারতজুড়ে একই রকম। সময়টা ছিল খারিফ শস্য তোলার ও বিক্রির এবং রবি শস্যের বীজ কেনা ও চাষের। হঠাৎ এক সন্ধ্যেয় ঘোষণা এল, সব ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল। বিপদের মুখে পড়ল দেশের কোটি কোটি কৃষক, বিপর্যয় নেমে এলে কৃষিতে। কিন্তু সরকার ঢাক পিটিয়ে গেল, নোটি বাতিলের ফলে ‘আচ্ছে দিন’ আসবে। স্বপ্ন দেখানো হল ক্ষতিগ্রস্ত কোটি কোটি মানুষকে। তাই রাষ্ট্রের স্বার্থে একটু কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। অনেকে মেনেও নিলেন, মিথ্যের পর মিথ্যে সাজিয়ে চলল নির্মাণ।
কৃষক আন্দোলনে ভারত অচল হচ্ছে বারবার। মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলোয় চাষীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে মহারাষ্ট্র সব রাজ্যেই বারবার জরাজীর্ণ কৃষকরা দখল নিয়েছে রাজপথের। মধ্যপ্রদেশ সরকার কৃষক আন্দোলনে গুলিও চালিয়েছে, ধিক্কার। কেন্দ্র সরকার কৃষক বিরোধী। গত চার বছরে নানা প্রকল্পের ঘোষণা ছাড়া কিছুই হয়নি, বরং বিপদ বেড়েই চলেছে চাষীদের। সে কেন্দ্র হোক কিমবা কোনো রাজ্য- সব বিজেপি সরকারের চরিত্রই কৃষক বিরোধী।
কয়েকদিন আগেই ছিল নোটবন্দীর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। কিন্তু পালন করল না সরকার, বিপদ বুঝে নীরব থাকলেন মোদীও। এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট, নোটবন্দী গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনে আঁধার নামিয়ে এনেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক মানুষ, কৃষক ও অসংগঠিত শ্রমিকরা। এবার চার রাজ্যের ভোট প্রচারে বিজেপিকে নোটব্যানের ভূত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে চাপ বাড়াল কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের রিপোর্ট। নোটব্যান নিয়ে আলোচনার জন্য তৈরি করা কমিটিকে দেওয়া রিপোর্টে কৃষি মন্ত্রক সরাসরি নোট ব্যানের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। এবং স্পষ্ট বলা হয়েছে নোটব্যানের ফলে চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনকি নগদের অভাবে সরকারি বীজ নিগম ১.৩৮ লক্ষ ক্যুইন্টাল গম বীজ বিক্রিই করতে পারেনি।
বিজেপি সার্বিক ভাবে কৃষক বিরোধী। সাথে আবার এই নোট বাতিলের খাঁড়া। মানুষকে বুঝতে হবে সত্যতা। মিষ্টি কথায় ভুলে ভারতবাসী যে ভুল করেছে এবার তা শোধরানোর সময়। কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্পোরেট সর্বস্ব মোদী সরকারকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ধর্মের জিগির তুলে যেভাবে রাষ্ট্রের মানুষকে শোষণ করছে মোদী, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সময়ের দাবি।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )