আগামী লোকসভা নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না তিনি। জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে নিজেই এ কথা ঘোষণা করলেন সুষমা। স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত তাঁর। ইতিমধ্যে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে তিনি তা জানিয়েও দিয়েছেন।
এ মাসের শেষেই মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। সে রাজ্যের বিদিশা কেন্দ্রেরই সাংসদ সুষমা। দলের হয়ে প্রচার চালাতে এই মুহূর্তে সেখানেই রয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ইনদওরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও এই বিষয়ে দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তবে আমি মনস্থির করেছি পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।’
২০১৬ সালে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর থেকে লাগাতার শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন ৬৬ বছরের সুষমা। যে কারণে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকবার হাসপাতালেও যেতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এই সরে যাওয়া কি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যজনিত কারণে? নাকি দলের অন্দরে ক্রমশ গুরুত্ব কমে যাওয়াই মূল কারণ? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
বরাবর লালকৃষ্ণ আডবাণীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুষমা স্বরাজ। তাই ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানকে যে ক’জন বিজেপি নেতা ভাল চোখে দেখেননি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। সে জারণেই বিদেশমন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েও কার্যত নাম সর্বস্ব মন্ত্রী হয়ে রয়ে গিয়েছেন তিনি। বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনাই হোক বা পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ, সুষমাকে উপেক্ষা করেই বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই জাঁকিয়ে বসেছেন খোদ মোদী।
সরকারের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব আরও প্রকট হয়ে ধরা পড়ে বছরের শুরুতে। লাভ জিহাদ নিয়ে দেশজুড়ে যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল গেরুয়াপন্থীরা, সেই সময় লখনউয়ের ভিনধর্মী এক দম্পতির পাসপোর্ট নিতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়েন। ওই দম্পতির পাশে দাঁড়ান সুষমা। তীব্র প্রতিবাদও করেন। ফলে গোটা ঘটনায় যখন হিন্দুত্ববাদীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে, সেই সময়ও নীরব ছিলেন মোদী।
প্রসঙ্গত, ইন্দিরা গান্ধীর পর সুষমা স্বরাজই একমাত্র মহিলা যিনি ভারতের বিদেশমন্ত্রীর পদের দায়িত্ব পেয়েছেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে হরিয়ানা সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়ে সংসদীয় রাজনীতির ইনিংস শুরু করেছিলেন তিনি। এমনকি ১৯৯৮ সালে খুম কম সময়ের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতেও বসেছিলেন। সেই তাঁকেই এবার গোষ্ঠীদ্বন্দের শিকার হতে হল দলের অন্দরে? তাহলে কি এ সবের জেরেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? এখনও পর্যন্ত তার সদুত্তর মেলেনি।