বিনয়-বাদল-দীনেশ। স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ হওয়া বাংলা মায়ের এই ৩ বীর সন্তান এবার সেলুলয়েডের পর্দায়।
সন ১৯৩০, ৮ ডিসেম্বর। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে অপার সাহস ও ১৮ রাউন্ড কার্তুজ নিয়ে ইংরেজ ছদ্মবেশে ঢুকে পড়েছিলেন ৩ তরুণ বিপ্লবী বিনয়, বাদল ও দীনেশ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে দীক্ষিত ‘বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স’ বিনয়-বাদল-দীনেশ তিনজনই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন, কোনও ভাবেই ছাড়া যাবে না সিম্পসনকে। শেষ পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার গুলির লড়াইয়ে তাঁরা তা করেও দেখিয়েছিলেন। অত্যাচারী আইজি (প্রিজন) এন এস সিম্পসনকে হত্যা এবং ১৫০জন গোরা পুলিশের সঙ্গে মারাত্মক গুলিযুদ্ধ আজকের বাঙালি কতটা মনে রেখেছে, সন্দেহ আছে। তবে সরকারি খাতায় ‘মিশন সিম্পসন’ আজও পরিচিত ‘অপারেশন রাইটার্স’ নামে। এবং ইতিহাসের পাতায় তা ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে স্থান পেয়েছে।
৮৮ বছর পর তিন বাঙালির এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাসকে এবার সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরতে এগিয়ে এলেন পরিচালক অঞ্জন দত্ত। ছবির নাম ‘অপারেশন রাইটার্স’। যার স্ক্রিপ্টও লিখেছেন অঞ্জন নিজেই। প্রযোজনায় রয়েছে এসভিএফ। বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তর চরিত্রে দেখা যাবে যথাক্রমে আবির চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে।
ছবি প্রসঙ্গে অঞ্জন বলেন, ‘আমি যে সব পার্সোনাল ছবি করি তা এখন দর্শক ওয়েবেই দেখে নিচ্ছে। আমাকে তো বড় পর্দার জন্য একটা লার্জার কিছু বানাতে হবে। কয়েক বছর আগে জেন্টলম্যান টেররিস্ট বলে একটি বই পড়েছিলাম। সেটা পড়ে আমার মনে হয়েছিল এই যে শিক্ষিত-রুচিশীল বাঙালির বাইরে ফাইটার বাঙালি রয়েছে সেটাকে দেখানোটা জরুরি। কারণ, বাঙালি যে ভয়ানক যোদ্ধা সেটা তো আমরা চট করে দেখতে পারি না বা জানতে পারি না।’
বিনয়, বাদল ও দীনেশের জীবনকে পর্দায় তুলে আনতে প্রচণ্ড রিসার্চের প্রয়োজন। এ বিষয়ে অঞ্জন জানালেন, রেফারেন্স হিসেবে তিনি চারটি বই ব্যবহার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমাকে গল্প বানাতে হচ্ছে না। কারণ, বিনয়, বাদল, দীনেশের জীবন এতটাই থ্রিলিং যে সব রসদ পেয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন,‘আমরা শুধু অলিন্দ যুদ্ধটাই জানি। কিন্তু, ওঁরা কীভাবে কলকাতায় এলেন এবং ঘটনার পর দীনেশ কেমনভাবে জেলে কাটালেন এগুলি আমি দর্শকদের জানাতে চাই।’
ছবি তৈরিতে প্রধান চ্যালেঞ্জ ১৯৩০ সালকে রিক্রিয়েট করা। অঞ্জন দত্তের কথায়, ‘এক্ষেত্রে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের উপর অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে গ্রামের দৃশ্যগুলি ভাবছি পুরুলিয়া, বোলপুরের কয়েকটি জায়গায় করে নেব।’ জানুয়ারি থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত শ্যুটিং চলবে বলেও জানালেন তিনি। জানা গেছে, আগামী বছর স্বাধীনতা দিবসের সময় মুক্তি পাবে ছবিটি।