আসামে গণহত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই শোকজ্ঞাপনে নিজেদের ফেসবুক, টুইটারের ডিপি কালো করে নজির গড়েছিল বাংলার মানুষ। মমতার দেখাদেখি একই পথে হাঁটল কংগ্রেস।
গতকাল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের নির্দেশে জেলায় জেলায় মিছিল করে ‘কালা দিবস’ পালন করল কংগ্রেস। কিন্তু এই কালা দিবসে কালা দিক উঠে এলো খোদ দলেরই। কলকাতায় কংগ্রেসের তিনটে জেলা কমিটি মিছিলের ডাক দিয়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই মিছিলগুলির একটিতেও দেখা গেল না প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীকে।
অধীর মিছিল করলেন সম্পূর্ণ আলাদা। দলের হেভিওয়েট নেতাদের সংস্রব এড়িয়ে। তবে কলকাতায় অধীরের করা সেই মিছিলটি আসামের বাঙালি খুনের প্রতিবাদে নয়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে। ফলে এতেই স্পষ্ট হল দলের মধ্যেকার বিভেদ। ফের প্রকাশ্যে চলে এল সৌমেন-অধীরের ‘ঠান্ডা লড়াই’।
মধ্য কলকাতা, বড়বাজার এবং দক্ষিণ কলকাতা— এই তিনটে জেলা কংগ্রেস কমিটি শনিবার বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় কলকাতায়। বড়বাজার জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সন্তোষ পাঠকের নেতৃত্বে রামমন্দির থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিল হয়। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের মিছিলে নেতৃত্ব দেন সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। আর মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে মিছিল হয় রাজাবাজার থেকে মৌলালি পর্যন্ত।
মিছিলগুলি ঘোষণা করার সময় জানানো হয় প্রদেশ কংগ্রেসের তরফ থেকে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, মিছিলগুলি প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্রের নির্দেশে হচ্ছে। তখনই জানা যায় অধীর থাকছেন না কোনও মিছিলেই। প্রদেশ কংগ্রেসের সকল শীর্ষনেতাই মিছিলে থাকতে পারলে, কলকাতায় থাকা সত্ত্বেও অধীর চৌধুরী কেন থাকলেন না জেলা কংগ্রেসগুলির ডাকা মিছিলে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। প্রসঙ্গত, অধীর চৌধুরীর মিছিল শুরু হয় দেড়টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট থেকে।
কেন অধীরের মিছিলে দেখা গেল না সোমেনপন্থীদের, কেন কলকাতার বুকে আয়োজিত তিন বিক্ষোভ মিছিলে দেখা গেল না অধীরকে— তা নিয়ে কংগ্রেসের কোনও শিবিরই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নয়।
রাজ্যে কংগ্রেসের অবস্থা এমনিতেই শোচনীয়। তার উপর দলের শীর্ষনেতারা যদি দলের অন্দরেই এইভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু করে দেন, তাহলে সামনের নির্বাচনে রাজ্য থেকে কংগ্রেস চিরতরে মুছে যেতে পারে— এই আশংকা নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন কর্মীরা।