ফের কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে খটামটি লেগে গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। ডেপুটি গভর্নরের বক্তব্য তুলে ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মোদী সরকারকে সাফ জানিয়ে দিল, ঋণখেলাপিদের উদ্ধার করা তাদের কাজ নয়।
ভোটের আগে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক, ছোট-মাঝারি শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে সমস্যা হোক, নগদে টান পড়ুক – এটা সরকার চায় না। তাই বেশ কিছু নির্দেশিকা দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ককে পাঠিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। তার মধ্যে ঋণ বিলি নিয়ে ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উপরে জারি করা বিধিনিষেধ শিথিল করা এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি)-গুলির জন্য নগদের ব্যবস্থা করা ছিল অন্যতম। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে গত কাল রাতে আর এক ডেপুটি গভর্নর এন এস বিশ্বনাথনের একটি পুরনো বক্তৃতা তুলে দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যেখানে বিশ্বনাথন সাফ বলেছেন, ‘যাঁরা ধার শোধ করতে পারবেন না, তাঁদের উদ্ধার করা ব্যাঙ্কের কাজ নয়। ব্যাঙ্কের প্রাথমিক দায়বদ্ধতা আমানতকারীদের প্রতিই’। অর্থাৎ কেন্দ্র সরকারের অঙ্গুলিহেলনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চলবে না।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাণ্ডারে এখন প্রায় ৯.৬ লক্ষ কোটি টাকা রয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, এর থেকে অন্তত ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা তাদের কোষাগারে চাইছে কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রক এই অর্থ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পুঁজির জোগানে কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু তাতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি।
৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কি না, সেই বিতর্ক এখন চরমে। কেন্দ্রের দাবি, তারা শুধু পরামর্শই দিচ্ছে। কিন্তু আরএসএস-এর সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ হুঙ্কার দিচ্ছে, ‘উর্জিত পথে আসুন। না হলে সরুন’। আগামী ১৯ নভেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, ১৯ তারিখের এই বৈঠকে নর্থ ব্লকের কর্তারা ফের বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে সরব হবেন। ফলে সেই বৈঠকে কেন্দ্রের সঙ্গে আরবিআই-এর সংঘাত কোন পথ নেয়, গভর্নরের পদ থেকে উর্জিত প্যাটেল সরে দাঁড়ান কিনা সেই নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ চাইছে, উর্জিত সরে দাঁড়ান। তার অর্থ, মোদী সরকারই তাঁকে সরাতে চাইছে। এটা রঘুরাম রাজন কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি’।
সব মিলিয়ে রণং দেহি অবস্থানে অনড় দু’পক্ষই। অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিরোধ কোন দিকে মোড় নেয়, তা জানতে ১৯ তারিখের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে দেশবাসী।