আমিষ খাবার চলবে না। রীতিমতো এমনই ফতোয়া দিল মোদীর রাজ্য। যার জেরে গুজরাটের আহমদাবাদের কয়েক দশকের প্রাচীন দুর্গাপুজো নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। এমন ‘হিন্দুত্ববাদী’ তুঘলকি ফতোয়ায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও লাগল রাজনীতির রঙ।
গোটা ঘটনায় বিরক্ত অহমদাবাদে বসবাসকারী বাঙালিরা। তাঁদের প্রশ্ন, আসামে এনআরসি-র প্রভাব খাটিয়ে যে বাঙালি খেদাও অভিযান শুরু হয়েছে মোদীর নিজের রাজ্যেও কি তার ঢেউ এসে লাগল? কৌশলে বাঙালিদের পাতে মারার চেষ্টা? কোনও জাতির খাদ্যাভাসের উপরে এভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর মানে কী?
মা দুর্গার আরাধনা বাঙালিদের কাছে রীতিমতো কার্নিভ্যাল। আমিষ-নিরামিষ নিয়ে থাকে না কোনও বাদবিচার। জমিয়ে চলে কাবাব থেকে মটন বিরিয়ানি। পুজোমণ্ডপ চত্বরেই থাকে নানা ধরনের আমিষ খাবারের স্টল। মাছ, মাংসের নানা পদের স্বাদ নেন বাঙালিরা। এবার শেষ মুহূর্তে আমিষ খাবারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওই মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অহমদাবাদ এডুকেশন সোসাইটি বা এইএস।
বেঙ্গল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের এক ট্রাস্টি জানিয়েছেন, পুজোর কয়েকদিন আগে তাঁদের জানানো হয়, প্রাঙ্গনে আমিষ খাবার পরিবেশন করা যাবে না। বিসিএ-র সচিব কনক দাস অধিকারী বলেন, পরের বছর অন্যত্র পুজো সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শহর থেকে দূরে হলে মণ্ডপ দর্শনে সমস্যায় পড়বেন দর্শনার্থীরা।
ঠিক কি ঘটেছে? গত এক দশক ধরে ওই প্রাঙ্গনটি রক্ষণাবেক্ষণ করে অহমদাবাদ এডুকেশন সোসাইটি। সাত দশক ধরে ওই প্রাঙ্গনে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছে আহমেদাবাদে বাঙালিদের সংগঠন বেঙ্গল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন বা বিসিএ। কোনওবারেই আমিষ-নিরামিষ নিয়ে দ্বন্দ্ব লাগেনি। কিন্তু এবারই পুজো উদ্যোক্তাদের জানানো হয়, দুর্গাপুজোয় আমিষ খাবারের দোকান দেওয়া যাবে না। শেষ মুহূর্তে এমন ফতোয়ায় বেজায় সমস্যায় পড়েন উদ্যোক্তারা। কোনও জাতির খাদ্যাভাসের উপরে এভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায় না, সেই যুক্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু ভবি ভোলেনি। হাতে কম সময় থাকায় অন্য জায়গায় পুজো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। নমো নমো করে সেখানেই পুজো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজোর সময় গুজরাটে চলে নবরাত্রি। দাণ্ডিয়া, গরবা করে এই ৯ দিন উদযাপন করেন গুজরাতিরা। নবরাত্রিতে প্রতিদিন একেক রূপে পূজিত হন মা দুর্গা। এই ৯দিন উপবাস ও নিরামিষ খেয়ে উৎসব পালন করেন গুজরাতিরা। কিন্তু দেশের পূর্বপ্রান্ত বাংলায় আবার চলে আমিষভোজন। রাস্তার চিকেন রোল থেকে বিরিয়ানি-উৎসবে থাকে না কোনও বাধানিষেধ। অনেকেই মনে করছেন, নবরাত্রিতে নিরামিষ খাওয়া হয়, সেই রীতিই বাঙালির দুর্গাপুজোয় চাপাতে চাইছে গুজরাট সরকার।
অতিসম্প্রতি ভোজ্যতেল ফরচুনের একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। রন্ধন তেল দিয়ে আমিষ পদ রান্না দেখানো হয়েছিল বিজ্ঞাপনে। হিন্দুদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয় হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠন। ফরচুন স্পষ্ট জানায়, বাংলায় দুর্গাপুজোয় আমিষ ভোজন চলে। ফলে বিজ্ঞাপনটি বাংলায় চলবে। দেশের অন্যপ্রান্তে চালানো হবে না। কিন্তু মোদীর রাজ্য সেসব মানলে তো! তাই পরের বছরের দুর্গাপুজো নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।