রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ‘বাংলা’ নাম। সাধারণভাবে এই রাজ্য বোঝাতে সবাই ‘বাংলা’ নামটাই বলেন। কিন্তু আপত্তি জানিয়েছে কেন্দ্র। তাদের বিরোধিতায় আপাতত নাম বদল শিকেয়।
সম্প্রতি রাজ্যের নাম পাল্টে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছিল রাজ্য। তারই প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিদেশ মন্ত্রককে জানিয়েছে, প্রস্তাবিত নতুন নামটির সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে বাংলাদেশের। এর ফলে আন্তর্জাতিক ফোরামে অনেকের কাছে দুটি নামের তফাত করা কঠিন হতে পারে। আবার বাংলাদেশ যেহেতু ভারতের মিত্র রাষ্ট্র তাই নতুন নামকরণ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করছে, এই বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের অভিমতও নেওয়া প্রয়োজন। কারণ এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পরিবর্তনেরও প্রয়োজন রয়েছে। বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বিদেশ মন্ত্রকের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া এলে মন্ত্রিসভার জন্য একটি ড্রাফট নোট তৈরি করে সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এরপর সংসদে পেশ হবে সংবিধান সংশোধন বিল, যেখানে মঞ্জুর হলে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি সরকার বাংলার নাম বদল আটকাচ্ছে রাজনৈতিক কারণেই। মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রেই নাম বদলে উদ্যোগী হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, মোগলসরাই স্টেশনের নাম বদলে রাখা হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন। আবার দিল্লীর ঔরঙ্গজেব সরণির নাম বদলে এপিজে আবদুল কালামের নামে রাখতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ‘বাংলা’ বরাবরই বঞ্চনার শিকার। সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে বাংলা রাখতে চেয়েছেন।
সেই জন্যই গত জুন মাসে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কারণে রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করতে চায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘পশ্চিম’ শব্দটি ১৯৪৭ সালে হওয়া বঙ্গভঙ্গের স্মৃতি বহন করে। বর্তমান বাংলাদেশ হয়ে যায় পূর্ববঙ্গ এবং এই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ হওয়ায় কেন্দ্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে রাজ্যের প্রতিনিধিদের একদম শেষে বলা সুযোগ মেলে। ২০১৬ সালের শেষে বিধানসভায় ফের প্রস্তাব আনে সরকার। সেখানে রাজ্যের নাম বাংলা ভাষায় ‘বাংলা’, হিন্দিতে ‘বঙ্গাল’ এবং ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। বিধানসভায় বিজেপি বাদে সব রাজনৈতিক দলই রাজ্যের নাম বদলে সহমত পোষণ করে। তারপর সেই প্রস্তাব পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে জানিয়ে দেয়, তিন ভাষায় আলাদা আলাদা নাম রাখার সিদ্ধান্ত মানা সম্ভব নয়। যে কোনও একটি নাম রাজ্য ইচ্ছেমতো বেছে নিতে পারে। কেন্দ্রের এই বক্তব্য জানার পরই সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তিন ভাষাতেই রাজ্যের নাম হবে ‘বাংলা’। কিন্তু এবার তাতেও আপত্তি জানাল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।