পুজোর আকাশ এখন আর মুখ ভার করে নেই। ইতিউতি মেঘ দেখা গেলেও, কেটেছে তাদের চোখ রাঙানি। ফলে সকালের দিকে আবারও দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। মাঝেমধ্যেই গোটা পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে সোনাঝরা রোদ। আর তাই, আবারও পর্যটকদের ভিড় জমছে পাহাড়ে। পুজোর ছুটিতে দিব্যি মেতে রয়েছেন পর্যটক ও পাহাড়প্রেমীরা।
অনেক দিন ধরেই ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই রব শোনা যাচ্ছিল পাহাড়ের পর্যটন মহলে। তবে এবারের পুজোতে সব কিছু ছাপিয়ে যে রেকর্ড ভিড় হবে এমনটাই আশা করেছিলেন সকলে। হলও তাই। গতকাল, পঞ্চমীর সকালেই সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেল। সমতল থেকে লাইন দিয়ে গাড়ি উঠেই চলেছে। কেউ এসেছেন বিমানে, কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে। কেউ কেউ নিজেদের গাড়ি নিয়েও হাজির পাহাড়ে।
পাহাড়ের হোটেলগুলো তো বটেই দার্জিলিং ও কালিম্পঙের ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা তিন হাজার হোম স্টে-তেও স্থানাভাব। দার্জিলিং ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রদীপ জিম্বা বলেন, আগে পর্যটকদের যে ভিড়টা দার্জিলিং ম্যাল, চকবাজার, চৌরাস্তাকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়াত, এবার সেটা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে গিয়েছে।
মাঝে তিতলির ভ্রুকুটিতে আবহাওয়া কিছুটা গোমড়ামুখো হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল পাহাড়ের হোটেল ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকদের। কিন্তু পঞ্চমীতে আবহাওয়া অনেকটাই অনুকূল। ফলে চিন্তামুক্ত হয়েছেন সকলে। খুশি পর্যটকরাও। একইসঙ্গে ম্যালের ঘোড়াওয়ালারাও।
রবিবারের পাহাড়ে শীত পড়েছিল জাঁকিয়ে। পর্যটকরা তো বটেই, স্থানীয় বাসিন্দারাও গায়ে চাপিয়েছেন পুলওভার, ওভারকোট। মাথা ঢেকেছে মাফলার, টুপিতে। স্থানীয়দের মতে, এবার সময়ের খানিকটা আগেই শীত পড়েছে পাহাড়ে। ম্যালে পর্যটকদের সমাগমের কথা মাথায় রেখে এবারই প্রথম দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
সেই উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে ম্যাল। কলকাতার মতই পুজোর আমেজ সেখানে। সারা দিন ঘুরে এসে সন্ধ্যের পর ম্যালের বেঞ্চে বসে পুজোর আনন্দও উপভোগ করছেন পর্যটকরা। সব মিলিয়ে আক্ষরিক অর্থেই পর্যটকদের ভিড়ে জমে উঠেছে পুজোর পাহাড়।
২০১৭ সালের পুজো একদমই ভাল যায়নি দার্জিলিং-কালিম্পঙে। পৃথক রাজ্যের আন্দোলনের নামে চলেছিল লাগাতার হিংসা। তার মাশুল দিতে হয়েছিল দার্জিলিংকেও। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর বারংবার পাহাড় সফর ও প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে পরিস্থিতি বদলেছে।
তাই সেই ক্ষতি এবার পুষিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন সকলে। দার্জিলিং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ সমীর সিঙ্ঘল বলেন, ‘এবার ভাল পর্যটক আসবে এমনটা আশা করছিলাম। সেটাই হয়েছে। ৫০ শতাংশেরও বেশি পর্যটক ইতিমধ্যেই পাহাড়ে চলে এসেছেন, বাকিরাও সপ্তমীর আগেই চলে আসবেন।’
ক্লাব সাইড রোডে গাড়ির ভিড় লেগেই রয়েছে। পর্যটকদের সঙ্গে গাড়ি চালকদের দরাদরির ছবিটা ধরা পড়ছে। ম্যালের পাশে মহাকাল মার্কেট হোক বা চকবাজার দোকানে কেনাকাটার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন দেশ-বিদেশের মানুষজন। ঘুম মনাস্ট্রি, পিস প্যাগোডা, বাতাসিয়া লুপ, লেবং, সুখিয়াপোখরি, টাইগার হিলের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে পর্যটকদের গাড়ির দীর্ঘ লাইন। টাইগার হিলের প্যাভিলিয়ন ম্যানেজার প্রদীপ লামা বলেন, ‘রবিবার ১১০০ পর্যটক টাইগার হিলে এসেছেন, সবাই সূর্যোদয় দেখতে পেয়ে খুশি।’